পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২১
ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে দেশব্যাপী সকল পুলিশ ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’।
২০১৭ সন থেকে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ প্রতিবছর ১ মার্চ পালন করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বছরের একটি বিশেষ দিনকে নির্বাচন করে তাদের অবদানকে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশেও অনুরূপ দিবস পালনের উদ্দেশ্যে পুলিশের পলিসি গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারই প্রেক্ষিতে প্রতিবছর স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিন ১ মার্চ “পুলিশ মেমোরিয়াল ডে” হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে নির্দেশনাবলী তৈরি করা হয়। সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে এই মহতি উদ্যোগ পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সারাদেশে ২০০৬ থেকে ২০১৫ সন পর্যন্ত সময়ে সরকারি দায়িত্ব পালনকালে যে সকল পুলিশ সদস্য শাহাদত বরণ করেছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ পালন উপলক্ষে তৎকালীন ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ এর পক্ষ থেকে বিগত ২০১৬ সনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে উপহার, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র প্রদানের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের সূচনা করা হয়েছে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিগত দশ বছরে আত্ম – উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদানের মাধ্যমে ২০১৭ সনে এর যাত্রা শুরু করা হয়েছে। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।
“কর্তব্যের তরে করে গেলে যারা আত্ম বলিদান,,,,,,
প্রতিক্ষণে স্মরণে রাখিব ধরি তোমাদের সম্মান,,,,,,,”
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবনী শক্তি সঞ্চারণের বীরত্ব গাথাঁ রচনা করে ছিলো বাঙালি পুলিশের অসীম সাহসী সূর্য সন্তানেরা।
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ধারণ করে দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, জঙ্গিবাদ দমন, মাদক নির্মূলে নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত, অপরাধ নিয়ন্ত্রন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধের চেতনায় পুলিশ সদস্যরা সাফল্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। সেবার সুমহান ব্রতে জনবান্ধব, নারীবান্ধব, শিশুবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করে কল্যাণমুখী আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতের পূর্বশর্ত আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে আত্মবিসর্জনে পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা কুন্ঠিত হয় না। সন্ত্রাসী, জঙ্গী ও রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তিকে দমন করতে গিয়ে বীর পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আমাদের দৃপ্ত শপথে বলীয়ান করে। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশ পুলিশের সেইসব সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগ ও গৌরবময় অবদানকে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মারণ করি। যুক্তরাষ্ট্র, যুুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে গত চার বছর যাবৎ ১ মার্চকে জাতীয়ভাবে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সকল বীর শহীদদের যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অকাতরে তাঁদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই মহান পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা রক্ষার নিমিত্তে বাহিনীর সদস্যগণ দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিবছর শত শত পুলিশ সদস্য আত্মাহুতি দিচ্ছে। এটি দেশের জন্য ত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত। এই বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও মহান আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য রচিত হয়েছে বিরল মর্যাদা ও গৌরবময় অধ্যায়।
আমরা মহান শহীদদের প্রতি চির ঋণী। বীর সৈনিকের স্মরণে প্রথম বারের মতো পালিত হয়েছে ১ মার্চ ২০১৭ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে। আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধা জানাতে এটি বিশেষ একটি দিন। শাহাদত বরণকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি ভালোবাসার পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের ক্ষণ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলেছিল প্রথম প্রতিরোধ আন্দোলন। হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করতে প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ডাক সারাদেশে। সেই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী মর্যাদার সঙ্গে লালন করে। এই পুলিশ বাহিনী সেই দিনের রক্তস্নাত অধ্যায়ের ধারাবাহিকতার ইতিহাস বহন করে চলছে। জাতির পিতা যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে পুলিশ বাহিনী সেইভাবেই জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। অকুতোভয় পুলিশ বাহিনী সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কর্তব্যরত অবস্থায় শাহাদত বরণকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণ করতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য অনন্য গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করল।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী তার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করে যাবে। সেবার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিবেদিত করবে। মানুষকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে দেবে সেই প্রতিজ্ঞা সকলের। ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকার স্বীকৃতি ও আত্মদানকারী অকুতোভয় পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের দিন।
“শহীদের রক্তের ঋণ, কেমনে শুধিবে বলো, কি আছে এমন?
এই ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। তারা স্মরণীয়, তারা বরণীয়, চির অম্লান, অক্ষয়।”
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রিঃ ও অদ্য অত্র জেলার ১৭ জন এবং ২০২০ সনে বাংলাদেশ পুলিশের লক্ষীপুর জেলার জীবন উৎসর্গকারী ০৫ পুলিশ সদস্য এএসআই(সঃ)/৩০৬৫৯ শ্রী রঘুনাথ রায়, নায়েক/২৭৩৩৬ মোঃ আল মামুনুর রশিদ, কনস্টেবল/১১২ মোঃ ছিদ্দিক উল্ল্যা, কনস্টেবল/৩৭৬ মোঃ ইকবাল হোসেন, কনস্টেবল/৩৩৯৭ মোঃ জামাল উদ্দিন এর পরিবারের হাতে পুলিশ সদর দপ্তর হতে প্রাপ্ত মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের উপহার সামগ্রী ও নগদ অর্থ হস্তান্তর করেন অত্র জেলা পুলিশের অভিভাবক পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান পিপিএম-সেবা মহোদয়।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২১ উপলক্ষে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, পরিবারবর্গকে সংবর্ধনা প্রদান এবং তাদের অবদানের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের অমর গাঁথা আমাদের উন্নত শিরে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে নিজেদের মানবিক কল্যাণে ও সোনার বাংলা বিনির্মাণে সর্বোচ্চ আত্মনিবেদনে সংকল্পবদ্ধ করবে। অগ্নিঝরা ১ মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে তে দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করতে চাই-
“লাখো শহীদের সোনার বাংলায়
অশুভ শক্তির ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ”
Leave a Reply