শিরোনাম :
চিলমারীতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতার ৮ আমরাই সাভার – Amrai Savar এর উদ্যোগে, আশ্রমে বিনামূল্যে বোতলজাত পানি বিতরণ প্রেসক্লাব চিলমারী‘র কমিটি গঠন পূণরায় সভাপতি লিটু, সাধারন সম্পাদক ছাবেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চিলমারীতে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন ধামইরহাটে পাবলিক স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন কমিটি গঠন নওগাঁ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গ্রেফতার কোটচাঁদপুরে আগুনে ৩টি দোকান ভস্মীভূত প্রায় ৫/৬ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই মুরাদনগরে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর জমি দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন মিরপুরের সাবেক ডিসি জসিমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ১৩৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

এ যেন অভিভাবকহীন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২০০ বার পঠিত

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সৈকত সংলগ্ন পাহাড় ঘিরে চলছে দখলের মহোৎসব। ইতোমধ্যে শহরতলীর দরিয়ানগর সৈকতে সাগর লতার বন সমৃদ্ধ বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক স্থাপনা। সৈকত সংলগ্ন ‘বানরের পাহাড়’ অভয়ারণ্যও ঘেরাবেড়া দিয়ে দখল করে নেয়া হচ্ছে। উখিয়ার সোনারপাড়ায় রেজু নদী সংলগ্ন প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানেও চলছে দখলবাজদের থাবা। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সমুদ্র সৈকত ও পাহাড়জুড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন দখলবাজি প্রশাসনের ‘অগোচরেই’ চলছে বলে জানান কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, গত কয়েক মাস ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা অনেক প্রতিবাদ-সংগ্রাম চালিয়ে এলেও সংশ্লিষ্টরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। ফলে গত কয়েকদিন ধরে দখলের মহোৎসব নতুন করে জোরদার হয়েছে। এখন সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি সৈকত সংলগ্ন পাহাড় ও নদী তীরবর্তী প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানেও স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে।কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর নামক স্থানে শেষ হয়েছে কক্সবাজার শহর। দরিয়ানগরে বনবিভাগের পিকনিক স্পটের ওপারের রাস্তায় চোখে পড়ে সাগরলতাসহ সৈকতের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস না করতে জেলা প্রশাসনের সতর্কতা সংক্রান্ত বিশাল বিলবোর্ড। আর এ বিলবোর্ডের পাশের রাস্তা ধরে সৈকতে গিয়ে দেখা যায় সাগরলতা বনের উপর রাখা হয়েছে স্পিডবোট, সাগরলতা ধ্বংস করে বালিয়াড়ির উপর গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। গত কয়েকদিন আগে এই সৈকতের বালিয়াড়ির উপর নানা স্থাপনা গড়ে তুলছে একটি প্যারাসেইলিং কোম্পানি। এর ১ কি.মি দক্ষিণে একইভাবে সৈকতে স্থাপনা গড়ছে আরেকটি প্যারাসেইলিং কোম্পানি। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘দরিয়ানগর গ্রীণ ভয়েস’ সভাপতি পারভেজ মোশাররফ বলেন, গতবছর এপ্রিলে দরিয়ানগর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসাবে দরিয়ানগর সৈকতে কয়েক হাজার বর্গমিটার জুড়ে সাগরলতা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। আর তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল স্থানীয় গ্রামবাসীকে। আমরা বিনা বেতনে গত ১০ মাস ধরে তা রক্ষণাবেক্ষণ করেছি। কিন্তু এখন সাগরলতাসহ সৈকতের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত বৃহস্পতিবার থেকে সৈকত সংলগ্ন ‘বানরের পাহাড়’ অভয়ারণ্যেও শুরু হয়েছে দখল প্রক্রিয়া। কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে প্রায় ১৬ কি.মি পথ গেলেই রামু ও উখিয়া সীমান্ত বিচ্ছিন্নকারী রেজু নদী। এই নদীর দু’পাড়েই রয়েছে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাগান। আর গত কয়েকদিন ধরে রেজু ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে উখিয়া অংশে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বন ধ্বংস করে স্থাপনা গড়ছে একটি পর্যটন কোম্পানি।স্থানীয় গ্রামবাসী খায়রুল আমিন ও নুরুল কাদের জানান, গত এক যুগেরও বেশি আগে ব্রিজ সংলগ্ন ডা. ফজলে আকবর চৌধুরী গং এর মাথাখিলা খাস জমিতে কোনো স্থাপনা না করে তিনি একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাগান ও তার মাঝখানে স্থানীয় জেলেদের জন্য ঘাট নির্মাণ করে দেন। এরপর স্থানীয়রাই সেই প্যারাবন রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে প্যারাবন ধ্বংস করে এখানে স্থাপনা নির্মাণ করছে একটি পর্যটন কোম্পানি।পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ইয়থ এনভায়রণমেন্ট ফোরাম (ইয়েস) সভাপতি ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, এখন কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত ও সৈকত সংলগ্ন পাহাড়ে চলছে দখলবাজদের রামরাজত্ব। এদের থাবাকে থামানো না গেলে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে গেলে পর্যটন শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।বাপা জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি উখিয়ার ইনানী সৈকতকে দ্বি-খন্ডিত করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্টে ঝাউবাগান দখল করা হচ্ছে। এ মহোৎসব অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সৈকত সংলগ্ন প্রকৃতির উপর দুর্বৃত্তপনার খবর উদ্বেগজনক। অবিলম্বে এসব কাজ বন্ধ করা দরকার।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বনবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড মো. কামাল হোসেন বলেন, সৈকতের বালিয়াড়ি তৈরির কারিগর সাগরলতা সাগরপাড়ের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা বায়োশিল্ডের অংশ। আর এই বায়োশিল্ড ধ্বংস হয়ে গেলে সৈকত ক্ষয়ের শিকার হবে।বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, দরিয়ানগর একটি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার বড়ছড়া খালের মোহনা সৈকতের প্রধান ‘বায়ো টার্বেটর’ লাল কাঁকড়া ও ‘ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার’ শামুক-ঝিনুকের প্রজনন স্থল। শামুক-ঝিনুক সৈকতের বায়োশিল্ডের একটি অংশ। এছাড়া এক্যুরিয়াম ফিশ থেরাপন জার্বুয়াসহ অসংখ্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননক্ষেত্র এই বড়ছড়া খালের মোহনা। এখানে পাখিসহ নানা সরীসৃপ ও কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়।বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনছারুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু কেউ যদি এই পরিবেশ ধ্বংসের পক্ষে কাজ করে, তাহলে তা সরকারের মূল নীতির বিরোধী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com