কুমিল্লার দেবীদ্বারে অজ্ঞাত ব্যাক্তির ফেলে যাওয়া কার্টুন থেকে ৩টি বোমা সাদৃশ্য বস্তুর মধ্যে পর পর ২টি বিস্ফোরণ ঘটেছে, ওই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টায় দেবীদ্বার উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বিহারমন্ডল বাজারের পল্লী চিকিৎসক সত্যরঞ্জন নাহার বন্ধ ফার্মেসীর সামনে। ঘটনার পর পর সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেল এ,এস,পি আরিুল ইসলাম, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহিরুল আনোয়ার একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং পুরো এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টুনিতে ঘিরে রাখেন।
এসময় সর্ব সাধারনকে ওই এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে একটি বোমা নিস্ক্রীয়দল এসে পর্যবেক্ষণ করে এবং পরে পরিত্যাক্ত বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি উদ্ধার সহ বিস্ফোরিত বোমা সাদৃশ্য বস্তুটির ধাতবদ্রব্য সহ বিভিন্ন সামগ্রী আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেন। সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা পুলিশের হেড কোয়াটার থেকে এডিশনাল এসপি মো. নূরে আলম ও এ্যান্টি টেরিরিজম এর এ,এস,পি মো. সালাহউদ্দিন এর নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করেন। এসময় বিহারমন্ডল বাজারের বিস্ফোরিত ঘটনাস্থলের পল্লী চিকিৎসক সত্যরঞ্জন নাহা’র বক্তব্য গ্রহন সহ স্থানীয়দের সাথেও কথা বলেন।
বিহারমন্ডল বাজারের পাশের বাড়ির নেপাল চন্দ্র দত্ত জানান, রাত অনুমান ৮টা ২০মিঃ-এ আমি আমার ঘরে খাবার খাচ্ছিলাম, এসময় একটি বোমের মত বিকট শব্দ পেয়ে দ্রæত ঘর থেকে বেড়িয়ে বাজারের দিকে আসছিলাম, বাজারে ঢোকার পরই আরো একটা বিস্ফোরণ হলে আমি দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি, কিছুক্ষণ পর আরো লোকজনকে সাথে নিয়ে বিস্ফোরণস্থলে যাই, দূর থেকে দেখি একটি ছোট কার্টুণ পড়ে আছে, তার পাশে আরো একটি বোমা সাদৃশ্য কালো কসটেপ পরিবেষ্টিত মাঝারী সাইজের অবিস্ফোরিত বস্তুটি ইলেক্ট্রিক তার জড়ানো দেখি, তখন আমরা আর সামনে এগিয়ে যাইনি। পরে পুলিশকে খবর দেই, পুলিশ এসে বিস্ফোরিত পুরো এলাকাটি লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখেন।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুমিল্লা ও ঢাকার সাথে যোগাযোগ করেন। রাত পৌনে ৩টায় কুমিল্লা এবং ঢাকা থেকে একটি বোমা নিস্ক্রীয়দল আসেন। সোমবার সকালে ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরো এলাকাটি সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যূষিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়। কারা, কি কারনে বা কি উদ্দেশ্যে এসব বস্তু এখানে ফেলে গেছে ? এসব বিষয়েও তারা আতঙ্কিত। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে গত রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে বলেও স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বোমা নিস্ক্রীয় দলের আলাপ আলোচনার বরাত দিয়ে জানান, বোমা সাদৃশ্য অ-বিস্ফোরিত বস্তুটির বিস্ফোরণ হলে অগ্নিকান্ড সহ বড় ধরনের ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এসব বোমা দেশীয় সরঞ্জাম যেমন মিনি গ্যাস সিলিন্ডার, বারুদ, পেট্রোলের সমন্বয়ে তৈরী হয়, ঠিক সেরকমই ছিল। তবে এটি শক্তিশালী বিস্ফোরক বলে তারা দাবী করেছেন। দেবীদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেল এ,এস,পি আরিুল ইসলাম’র সাথে সোমবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি জানান, বিষয়টি এখনো তদন্তাধিন।
ঢাকা থেকে আসা বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণকারী দল, পিবিআই ও পুলিশের হেড কোয়টার থেকে আসা উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ ও আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। বিশেষজ্ঞদল এসব আলামত পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে এগুলো ককটেল/ বোমা বা অন্য কিছু হলে তার মতামত পাওয়ার পরই আমরা বলতে পারব এগুলো কি ছিল, বা কারা, কেন, কি কারনে, কিভাবে এখানে আসল। তদন্তের পূর্বে এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছেনা। তবে এ ঘটনায় সাধারন ডায়েরি হবে, তদন্তের পর মামলা সহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply