আলমগীরঃ এই যে রাস্তার দু’ধারে তালগাছের সারি দেখছেন,এটা কোন মন্ত্রী-এমপির লাগানো নয়।এই অসামান্য কাজটি করেছেন একজন ভিক্ষুক,গহের আলী। তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।অসহায়কালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা গহের আলী ভিক্ষা করে জীবন বাঁচাতেন।গ্রামের মেঠো রাস্তায় প্রখর রোদে হাঁটতে হাঁটতে যখন তিনি হাঁফিয়ে উঠতেন তখন একটি বাবলা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতেন।রাস্তাটি ছিল বেশ দীর্ঘ।অথচ সেখানে বাবলা গাছ ছিল মাত্র একটি। এই দীর্ঘ রাস্তা পার হতে তাঁর অনেক কষ্ট হতো।একদিন বিশ্রামকালে তিনি ভাবলেন,রাস্তার দুই ধারে গাছ লাগালে কেমন হয়?কিন্তু গাছের চারা কিনবেন কী দিয়ে, হাতে কোন টাকা নেই! মনটা মুষড়ে গেল তাঁর। তবে স্বপ্নটা জিইয়ে রইলো মনে।এরপর ভিক্ষা করতে গিয়ে এক বাড়িতে দেখলেন উঠোনে কয়েকটা তালের আঠি (বিচি)।তখন ভিক্ষার সাথে সেই তালের বিচি চেয়ে নিলেন এবং ফেরার পথে রাস্তার ধারে বিচিগুলো রোপন করলেন।এরপর থেকে যখন যে বাড়িতে যেতেন সেখানে ভিক্ষার পাশাপাশি তালের বিচির খোঁজ করতেন এবং পেয়ে গেলে তা রাস্তার ধারে রোপন করে নিজের আশ্রয়স্থলে ফিরতেন।এভাবেই কেটে গেল অনেক বছর।এক সময় দেখা গেল এভাবে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের বলিহার সেতু থেকে খোর্দ্দ নারায়ণপুর সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার পাশে এবং এলাকার বিভিন্ন গোরস্থান ও খালি জায়গায় ৩০ হাজার তাল গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন।দীর্ঘকাল ধরে তাঁর এই তাল গাছ লাগানোর খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।এ নিয়ে ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়।তখন বিষয়টি নজরে আসে সরকার ও পরিবেশবাদীদের।এর পরের বছর ২০০৯ সালে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক দেওয়া হয় গহের আলীকে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পদক তুলে দেন ভিক্ষুক গহের আলীর হাতে।গহের আলী যখন জাতীয় পরিবেশ পদকে ভূষিত হন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৭ বছর।পরের বছরই তিনি তাঁর প্রিয় গাছগুলোর মায়া কাটিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। গহের আলী আজ বেঁচে নেই!কিন্তু তাঁর লাগানো তাল গাছগুলো কেবল ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিককে শীতল ছায়া-ই দেয় না বরং বজ্রপাত থেকে অসংখ্য মানুষের প্রাণও রক্ষা করে থাকে।তাঁকে জানাই হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি। মহান স্রষ্টা যেন তাঁর বিদেহী আত্মাকে শান্তিতে রাখেন।
Leave a Reply