গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদা দাবীর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সহ চার সদস্য গ্রেফতার, লুণ্ঠিত টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার।জনৈক গার্মেন্টস র্পাটস এর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ আল মামুন এর ব্যক্তিগত মোবাইল ০১৮১৯-০৮২৬৮৩ নাম্বারে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি ফোন করে জানায় যে,সে কিছু গার্মেন্টস মেশিনারীজ তার নিকট বিক্রয় করতে ইচ্ছুক।তখন তিনি মেশিনারীজ গুলো দেখতে চাইলে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি তাকে বাকলিয়া থানাধীন রসুলবাগ আবসিক এলাকার ব্লক-বি ০১,বাড়ী নাম্বার-১৮৭,(শওকতের বাসা) এর সামনে আসতে বলে।আল মামুন অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজ সেরে ঐদিন রাত অনুমান ০৭.৪৫ ঘটিকায় উক্ত স্থানে গেলে পূর্বে রুমের বাইরে উৎ পেতে দাড়িঁয়ে থাকা ০২ জন থাকা দুইজন ব্যক্তি রুমের ভেতরে মেশিন আছে বলে তাকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে রুমটির দরজা বন্ধ করে দেয়।
ভিতরে ঢুকে তিনি আরো ৫ জনকে সেখানে দেখতে পান।তাদের মধ্যে ০৬ জনের বয়স অনুমান ২০ থেকে ২৫ এবং ০১ জনের বয়স অনুমান ৩৫ বছর বলে তার নিকট মনে হচ্ছিল।রুমের ভিতর ঢোকানো মাত্র তিনি কিছু বুঝে উঠার আগে ০৭ জন ব্যক্তি মিলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।তাদের এমন আচরনে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন।তাকে মারার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা তার কাছ থেকে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা চাঁদা দাবী করে।কিন্তু,তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মধ্যে একজন তাকে কিল,ঘুষি মারতে থাকলে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তার পকেটে থাকা ১৫০০০/- টাকা এবং তার একটি এন্ড্রোয়েড MI NOTE 8 মডেলের মোবাইল ফোন,যার মূল্য ১৯,০০০/- টাকা দিয়ে দেন।ইহাতেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে আল মামুন এর নিকট অবশিষ্ট টাকা দাবী করতে থাকে।
তখন তিনি নিরুপায় ও অনেকটা বাধ্য হয়ে তার ব্যবসায়ী বন্ধু নজরুলের নিকট হতে বিকাশে ১০,০০০/- টাকা তাদের একজনের মোবাইল নাম্বারে এনে দেন।এরপর তাকে ছেড়ে দিতে বললে তারা আরো অবশিষ্ট টাকা দাবী করে।তিনি তাদের কথা মতো অবশিষ্টা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অজ্ঞাতনামা ০৭ জন ব্যক্তি তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা না দিলে তাকে প্রানে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।একই সাথে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার সামনে ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনের সরঞ্জাম রেখে ছবি তোলে এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে পুলিশ ডেকে পুলিশের হাতে তুলে দিবে মর্মে হুমকি প্রদান করেন।
পরবর্তীতে টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপন করায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেদম মারধর শুরু করে।এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা তাকে আটকে রেখে আসামীরা তার কাছ থেকে বিকাশ এবং নগদ মিলিয়ে সর্বমোট-২৫,০০০/- টাকা এবং একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন MI NOTE 8 যার মূল্য ১৯,০০০/- টাকা নিয়ে উক্ত ঘর হতে বেড়িয়ে যায়।অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা চলে যাওয়ার পর তিনি উক্ত রুম থেকে কৌশলে বের হয়ে চিৎকার করলে স্থানীয় পথচারী সহ উক্ত বিল্ডিং এর মালিক মোঃ শওকত হোসেন (৩৫) তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন এবং পলাতকদের একজনকে তিনি চিনে ফেলেন।পলাতক ব্যক্তিকে আটক করার চেষ্টাকালে তার চেহারা দেখে তার নাম রমজান এবং সে বাকলিয়া থানাধীন বড় মিয়া মসজিদ পুকুরপাড় এলাকার লোক বলে এলাকার লোকজন চিনতে পারে।
পরবর্তীতে আল মামুন পথচারীর মোবাইল নিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল দেন।কল দেয়ার পর বাকলিয়া থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌছায় এবং বাড়ীর মালিক ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাস্থলের কক্ষটি ভাড়া নেওয়া আসামী মামুন (২৩) ও জিহান (২৫)দ্বয়কে সনাক্ত করেন।পুলিশকক্ষটি তল্লাশী করে আসামী মামুনের এসএসসি পরিক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি,১২ নং সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক সনদের কপি,আসামী জিহানের নামে ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রবেশপত্র সহ ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনের সরঞ্জাম-ফয়েল পেপার,গ্যাসলাইট ইত্যাদি সহ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে বাকলিয়া থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা রুজু হলে বাকলিয়া থানার সুযোগ্য অফিসার ইনচার্জ জনাব মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন-পিপিএম এর নেতৃর্ত্বে চৌকস অফিসার দ্বারা উক্ত ঘটনায় জড়িত আসামী ১। মোঃ মামুন (২৩)কে কল্পলোক আবাসিক এলাকা হইতে ইং ২০/১১/২০২০ তারিখ রাত ০১.১০ ঘটিকায়,২। আব্দুল্লাহ ওয়াহিদ জিহান (২২) কে রাহাত্তারপুল এলাকা হইতে ইং ২০/১১/২০২০ তারিখ রাত ০১.৪৫ ঘটিকায়,৩। মোঃ রমজান (৩৫)কে কালামিয়া বাজার এলাকা হইতে ইং ২০/১১/২০২০ তারিখ রাত ০৪.৩০ ঘটিকায়,৪। মোঃ আরিফ (২১)কে বাকলিয়া খালপাড় এলাকা হইতে ইং ২০/১১/২০২০ তারিখ রাত ০৪.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে বাদীর এন্ড্রেয়েড MI NOTE 8 মডেলের মোবাইল ফোন (যাহার মূল্য ১৯,০০০/- টাকা) এবং আদায়কৃত চাঁদা হইতে ২নং আসামী আব্দুল্লাহ ওয়াহিদ জিহান (২২) এর ভাগে প্রাপ্ত নগদ ২,৭০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য যে,আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে ১নং আসামী মোঃ মামুন (২৩) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ এবং ২নং আসামী আব্দুল্লাহ ওয়াহিদ জিহান (২২) চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানা যায়।
Leave a Reply