শরিফা ইসলাম সুমি
পহেলা ডিসেম্বর থেকে দেশে প্রথমবারের মত সরকারী নির্দেশনায় ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করে প্রায় ৭শত জন পর্যটক নিয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন গেছে এমভি বার আউলিয়া নামে একটি পর্যটক বাহী জাহাজ। এর ই সাথে নানা বিধি নিষেধের আওতায় স্থবির হয়ে থাকা কক্সবাজার সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকেরা জানিয়েছেন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তারা সরকারী নির্দেশনা মেনেই সেন্টমার্টিনের আনন্দ উপভোগ করবেন। সেন্টমার্টিন যেতে ট্রাভেল পাস সহ পর্যটকদের সেবা দিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত কমিটির সদস্য, ট্যূরিষ্ট পুলিশের প্রতিনিধি, কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধি সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বারো আউলিয়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছলে সেন্টমার্টিনে বসবাসরত বাসিন্দারা ফুল দিয়ে স্বাগতম জানিয়েছেন পর্যটদের। তবে নিরাপদে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছে জাহাজটি কিছুক্ষণ জেটিতে নোঙ্গর করে পুনরায় পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার ফিরে আসে।সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ১০ টার দিকে শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে প্রায় ৭শত পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন রওনা দিয়েছে কর্ণফুলী শীপ কিল্ডার্সের জাহাজ এমভি বারো আউলিয়া। সেন্টমার্টিন যেতে কেয়ারী সিন্দাবাদ নামে অপর একটি জাহাজ টিকিট বিক্রি করলেও পর্যাপ্ত পর্যটক না পাওয়ায় তাদের যাত্রা বাতিল করে বারো আউলিয়া জাহাজে করে সেন্টমার্টিন পাঠায় কেয়ারী কতৃপক্ষ। এতে সাময়িক ভোগান্তি হয় পর্যটকদের।অপরদিকে প্রায় দীর্ঘ ৯ মাস স্থবির থাকা কক্সবাজার সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের দ্বার উম্মোচন হওয়ায় খুশি পর্যটকেরা।ট্রাভেল পাস সংগ্রহে কিছুটা ভোগান্তি হলেও সেন্টমার্টিন যেতে পারায় তারা অভিভূত ও আনন্দিত। অনেকে জীবনে প্রথম বারের মতো সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় অন্যরকম খুশির বন্যা পর্যটকদের মনে। রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক দম্পতি হাসান মির্জা ও দিলরুবা মির্জা জানান, তারা নতুন বিয়ে করে হানিমুনে এসেছেন কক্সবাজার। ইচ্ছে ছিল তারা একরাত সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত যাপন করবেন। বিধিনিষেধ শীতিল হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমনে গিয়ে রাত যাপন করার সুযোগ পাওয়ায় খুবই আনন্দিত। ঢাকা সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইবনুল আকিব ও ঢাকা কলেজের আরিফ মৃধা ও সোহান সাথী সহ অনেকে জানিয়েছেন তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমনে যেতে পারায় খুবই খুশি। বিধিনিষেধ মেনেই তারা সেন্টমার্টিনের আনন্দ উপভোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।বারো আউলিয়া জাহাজের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন,সেন্টমার্টিন ভ্রমনে এপর্যন্ত ৩ টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। পর্যটক সংকটে হতাশার কথাও জানান তিনি। কারন একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন চলাচলের ক্ষেত্রে অনেক খরচ। পর্যাপ্ত পর্যটক না হলে জাহাজ চলাচলও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় কতৃক গঠিত পর্যটক নিযন্ত্রণে ৫ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলার শর্তে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমনের অনুমতি দেয়েছেন। এতে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের পন্য ব্যবহার ও বহন না করতে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং যারা প্লাস্টিকের পন্য বহন করে এনেছেন সেগুলো ফেরত নিয়ে পাটপন্য জাতীয় ব্যাগ প্রদান করা হয়। এতে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষায় ও ভূমিকা রাখবে। পর্যটকেরা এতে সহযোগী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সকালে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে উপস্থিত হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপগামী পর্যটকদের সাথে কথা বলেন এবং সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে অবস্থান করার অনুরোধ জানান। এসময় পর্যটকেরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভ্রমনজনিত বিধিনিষেধ আরো শীতিল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। পরে জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এই মৌসুমের শুরু এবং প্রথমবারের পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলাচলের শুভ উদ্ভোধন করেন। বর্তমান সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে নভেম্বর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিনমাস জাহাজ চলাচলের অনুমতি প্রদান করে। তন্মধ্যে প্রতিদিন ২০০০ পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমনে যেতে পারবে কিন্ত নভেম্বরে রাত্রি যাপন করতে পারবেননা। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে রাত্রি যাপন করতে পারবেন এবং ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোন পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেনা। ওই সময় দ্বীপ পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।উল্লেখ্য যে,মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর আভ্যন্তরীন বিরোধে সীমান্তে ব্যাপক গুলাগুলিতে টেকনাফ সীমান্তে নিরাপত্তার অভাব, নাব্যতা সংকট সহ নানা কারণে টেকনাফ সেন্টমার্টিন সমুদ্র পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।সেকারনে কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএর ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন যেতে জাহাজ চলাচল করবে এবং কয়েকদিন পর ইনানী নেভাল জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন গামী জাহাজ চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply