শিরোনাম :
খুনের মামলার দুই আসামি গ্রেফতার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারা হাসপাতাল এখন রোল মডেল বরগুনা-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত এ্যাড. মোঃ রেজবুল কবির…! নবীনগরে পুকুর থেকে কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্বার আগামীতে শহীদ জিয়ার দল বিএনপিই সরকার গঠন করবে – জনসভায় এস এ সিদ্দিক সাজু শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোপালপুরে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত গলাচিপায় নদী ভাঙনে সড়ক বিলীন হওয়ার শঙ্কায় মানববন্ধন বিজিএমইএ ও স্ট্যানলি স্টেলার বৈঠক: টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় অঙ্গীকার রাঙ্গাবালীতে দশ দিনব্যাপী আনসার-বিডিপি প্রশিক্ষণ চলছে রাজনৈতিক সমঝোতার সংকটে বাংলাদেশ—অর্থনীতি ও জনআস্থা কোথায় দাঁড়িয়ে

তিনটি আসনেই ফিরতে চায় বরগুনা বাঁশি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৭৯ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ মো নেছার উদ্দিন
বরগুনা জেলার সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের জন্য বরগুনায় পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নের বাস্তব প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এই দাবি বাস্তবায়নের এখনই সময় এসেছে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন নাগরিকরা।
ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বরগুনা অঞ্চলে তিনটি পৃথক রাজনৈতিক এলাকা ছিল, যা স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনে তিনটি পৃথক আসন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১ সাল পর্যন্ত বরগুনায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল — পাথরঘাটা-বামনা, বেতাগী-বরগুনা, আমতলী-তালতলী। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে আমতলী-তালতলী আসনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বরগুনা-১ এর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরগুনাবাসীর মধ্যে এখনও অসন্তোষ ও বঞ্চনার অনুভূতি বিদ্যমান। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৬(২) ধারা অনুযায়ী আসন বিলুপ্তির সময় প্রশাসনিক কাঠামো, জনসংখ্যা, আয়তন ও ভৌগোলিক বাস্তবতা যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। বিশেষ করে আমতলী ও তালতলীর মতো দুটি বড় উপজেলা বৃহৎ সংসদীয় আসনের বাইরে পড়ে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে বরগুনা জেলার সর্বস্তরের জনগণ, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক নেতারা তিনটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তারা মনে করেন, এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের বিষয়।
কেন বরগুনা জেলার ৩টি সংসদীয় আসন পূর্ণবহাল করা জরুরি? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা,  বিএনপি’র প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সাবেক (এপিএস) ও বরগুনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য ওমর আবদুল্লাহ্ শাহীন বলেন – সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর মহান সংসদে পৌঁছানো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উন্নয়ন, নদীভাঙন প্রতিরোধসহ মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিতের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে বরগুনায় ৩টি সংসদীয় আসন পূর্ণবহালের কোন বিকল্প নেই।
বরগুনা ইউনাইটেড স্টেট জার্নালিস্ট ফোরামের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক  সাংবাদিক মোঃ নেছার উদ্দিন বলেন,“আগে যখন তিনটি সংসদীয় আসন ছিলো, তখন বরাদ্দ ও প্রশাসনিক কাজের ভারসাম্য ছিল এবং উন্নয়নের ছোঁয়া আমতলী তালতলীর গায়ে লেগেছিলো। তবে এখন দুই আসনে সে সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে, শুধু তাই নয় আমতলী তালতলীর বর্তমান উন্নয়ন ছোয়াটা এত দূরে এগিয়ে গিয়েছে আমতলী তালতলী মহাসড়ক থেকে গর্ভবতী মহিলার চলাফেরা করলে গর্ভপাত আমতলী তালতলী মহাসড়কেই হয়ে যাবে। এই বৈষম্যের অবসান করতে হলে তিনটি আসনই পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়নের চাহিদাও বেড়েছে, কিন্তু আসন কম হওয়ায় বাজেট ও প্রতিনিধি সংখ্যা কমে যাওয়ায় বরগুনাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে।”
বর্তমানে আমতলী ও তালতলী উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় চার লক্ষ ছাড়িয়েছে এবং আয়তন প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটার। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী একটি পৃথক সংসদীয় আসন থাকা সময়োপযোগী ও যৌক্তিক দাবি বলে মনে করছেন তারা।
সাধারণ জনগণের অভিমত, একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এত বৃহৎ এলাকার কার্যকর প্রতিনিধিত্ব করা কঠিন, যার ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিলম্ব এবং রাজনৈতিক সচেতনতায় হ্রাস ঘটে।
বরগুনার একজন সাধারণ নাগরিকের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও প্রধান নির্বাচন কমিশন মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি কামনা করে বলা হচ্ছে—“আমরা রাজনৈতিক সুবিধা চাই না, চাই ন্যায্য অধিকার। বরগুনার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করা হোক।”
অতীতে বরগুনা-১ (সদর ও বেতাগী), বরগুনা-২ (পাথরঘাটা ও বামনা), বরগুনা-৩ (আমতলী ও তালতলী) আসনগুলো ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আসন সংখ্যা তিন থেকে কমিয়ে দুই করা হয়—বরগুনা-১ (সদর, আমতলী, তালতলী) এবং বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বেতাগী, বামনা)।
এই পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনিক জটিলতা ও নির্বাচনী সময় পরিবহন সমস্যা বেড়েছে। বিশেষত পায়রা ও বিষখালী নদীর বিভাজন পূর্ব ও পশ্চিম বরগুনার যোগাযোগকে কঠিন করে তুলেছে। এর ফলে আমতলী ও তালতলীর প্রায় চার লাখ মানুষের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চনা ঘটেছে।
বর্তমানে বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৪ জন এবং বরগুনা-২ আসনে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৩০ জন। শুধুমাত্র আমতলী ও তালতলী মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন, যা একটি পূর্ণ সংসদীয় আসনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাই এই দাবি আদায়ে বরগুনাবাসী প্রত্যাশা করছেন দ্রুত প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যাতে তারা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব পেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com