
তাদের হাতে সত্য প্রকাশের কলম, মুখে সাহসিকতার কথা। অন্য পক্ষ আত্মস্বার্থে নিমজ্জিত, ক্ষমতার লোভে নীতিহীনতায় ডুবে আছে। বর্তমানে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সাংবাদিকরাই নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। একই সংবাদপত্র বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকরাও একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। এতে শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো গণমাধ্যম পেশা। অথচ এই বিভাজনের সুযোগ নিচ্ছে বহিরাগত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এবং গণমাধ্যমবিরোধী শক্তিগুলো। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধ অনুসন্ধানে যাওয়া সাংবাদিককেই হয়রানি করছে একই পেশার কেউ, শুধুমাত্র নিজেকে জাহির করার জন্য। এতে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান অসম্ভব হয়ে ওঠে। সাংবাদিকদের মধ্যকার এই অনৈক্য গণমাধ্যমকে করছে দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য। এখন পত্রিকা বিক্রেতা, কম্পিউটার অপারেটর,প্রেসকর্মী, পত্রিকা অফিসের পিয়ন,গার্ড —এমনকি যারা কখনও সাংবাদিকতার প্রাথমিক প্রশিক্ষণও নেননি, তারাও সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করছেন। এতে শুধু পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে না, পেশাজীবী সাংবাদিকদের সামাজিক অবস্থানও দিন দিন হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। এই সব কারনে সংবাদমাধ্যম নিজেই নিজের সঙ্গে লড়াই করছে। একদিকে রয়েছে প্রথাগত সংবাদপত্র ও টেলিভিশন মিডিয়া,অন্যদিকে উত্থান হয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের এক বিশাল জগৎ। এই অনলাইন সাংবাদিকতার ব্যুমেরু বৃদ্ধি যেমন তথ্যপ্রবাহকে গতিশীল করেছে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ সংবাদমাধ্যমের প্রতি আস্থাকে করেছে দুর্বল। প্রতিযোগিতা এখানে চরমে—সবাই চায় ‘আগে’ সংবাদ দিতে, কে আগে ‘ভিউ’ পাবে, সেটাই মুখ্য। ফলে, সত্য যাচাই কিংবা তথ্য নির্ভুলতা আজ বড় বিষয় নয় অনেকের জন্যই। সাংবাদিকতায় পেশাগত ঝুঁকি ও হতাশার চিত্র অমি প্রতিনিয়ত দেখতে পায়।সাংবাদিকতা নিঃসন্দেহে একটি বিপজ্জনক পেশা। সঠিক ও সত্য সংবাদ প্রচারের কারণে বহু সাংবাদিককে—
শারীরিক আক্রমণ,হুমকি,মামলা—এমনকি মৃত্যুর মুখেও পড়তে হয়েছে।বিপরীতে, প্রকৃত সাংবাদিকরা আজ সমাজে অবমূল্যায়িত। জাতির বিবেক আজ নিঃস্ব ও অবহেলিত হচ্ছে। সাংবাদিক নিজেই সাংবাদে পরিনত হচ্ছে। দেশে সাংবাদিকদের নিয়ে মব তৈরী হচ্ছে। যেনম স্বৈরাচারমুক্ত সুবিধাবাদ বিরোধী নামের ভুয়া ফেসবুসহ অনেক ফেসবুক পেজে প্রকৃত সাংবাদিদের বিরুদ্ধে একের পর একের বানোয়াট তথ্য ও বিগত সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিদের ছবিযুক্ত করে হয়রানী করছে। এ বিষয়ে বহু পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ফল পায়নি সাংবাদিক সমাজ। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও পেশাগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করা না গেলে, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই আমার সরকারের কাছে দাবী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিন । এ সব ভূয়া ফেসবুক ব্যবহারকারীদের খুজে বের করে আইনের আওয়াতায় আনতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিকতার এই অন্ধকার পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন—সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য। পেশাগত নৈতিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতায় অটল থাকা বহিরাগতদের হাত থেকে পেশাকে রক্ষা করা
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা পরিহার করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সাংবাদিকতার মহৎ চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে—সততা, সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। এ যুদ্ধ জয় করতে হলে সাংবাদিকদের নিজেরাই হতে হবে নিজের শক্তি, নিজের অভিভাবক। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক, কিন্তু তা যেন হয় গঠনমূলক ও ইতিবাচক। প্রতিহিংসা নয়, প্রয়োজন সহমর্মিতা ও পেশাদারিত্ব। গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে, সাংবাদিকদের আগে নিজেদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে নিজেদের প্রতি।
লেখক ও গবেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতিঃ ঢাকা প্রেস ক্লাব
Leave a Reply