প্রথম বছরে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় ৩১ শতাংশ মানুষকে এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি টিকা কিনে দেওয়া হবে ৯ শতাংশ মানুষকে।
ফলে ২০২১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৬ কোটি ৯১ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনা সামনে রেখে করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ব্যয় ৬ গুণের বেশি বাড়িয়ে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সীমিত পরিমাণে টিকা যাতে সমবন্টন হয়, সেজন্য সরকার ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চলতি বছরের ২ জুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ‘কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্ড অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা বা ১০ কোটি ডলার বিশ্বব্যাংক এবং বাকি ২৭৭ কোটি টাকা সরকারের অর্থায়ন করার কথা।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম ছিল হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহ, ওষুধ ও প্রতিষেধক কেনা, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা, গবেষণা ইত্যাদি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন কেনাকাটা ও অন্যান্য খাতে ১১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন প্রকল্পটিতে টিকা কেনা ও সংরক্ষণ, পরিবহন, জনগণকে টিকা দেওয়া, প্রশিক্ষণসহ নতুন অনেক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
এ জন্য ব্যয় বাড়ছে। এ প্রকল্পে নতুন করে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার দেবে। এ ছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দেবে ১০ কোটি ডলার। সরকারও নতুন করে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার মনে করছে, প্রথম পর্যায়ে যেসব টিকা অনুমোদন পাবে সেগুলোর সরবরাহ সীমিত থাকবে। ফলে এই সীমিত পরিমাণের টিকা যাতে সমবণ্টন হয়, সে জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের আগে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সরকার আশা করছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে কোভ্যাক্স থেকে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের জন্য এক কোটি ডোজের বেশি টিকা পাবে। আর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারিতে অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাবে। সংশ্নিষ্টরা জানান, টিকা এনে রাখার জন্য উপযুক্ত জায়গারও ঘাটতি রয়েছে। এ ধরনের টিকা রাখতে বিশেষ ধরনের শীতল কক্ষ দরকার।
করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আনার পর তা নাগরিকদের দেওয়ার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের বিশেষ শীতল কক্ষ গড়ে তোলা হবে। এর সঙ্গে টিকা বহনে আইস লাইন্ড ফ্রিজ, কোল্ড বক্স, ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার ও ফ্রিজ ইন্ডিকেটর লাগবে। নাগরিকদের কাজের ধরন, বয়স, রোগসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাদের কখন টিকা দেওয়া হবে, সে তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
অগ্রাধিকারভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে গুজবের আশঙ্কা করছেন সংশ্নিষ্টরা। গুজব প্রতিরোধে কারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাচ্ছেন, কেন পাচ্ছেন এবং প্রত্যেকেই টিকা পাবেন- এ বিষয়ে সরকার প্রচার চালাবে। টিকা প্রদান কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। গুজব প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply