গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য পালকি। এ বাহনে চড়া দারুণ মজা। আগের অনুভূতি আর বর্তমান অনুভূতির অনুভব মনে হলে নিদারুণ কষ্ট হয়। বিয়ে উৎসবে পালকির কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। একটা সময় ছিল বিয়েতে পালকি চাই। গ্রামীণ আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে, বর-কনে পালকি চড়ে উভয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়ার আনন্দঘন একটা দারুণ সময় ছিল। গাঁও-গ্রামের পথে পালকিতে করে নববধূকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে মন জুড়াতো গাঁওয়ের বধূ, কখনও মা-চাচি, উঠতি বয়সের চঞ্চল মেয়েরাও বাদ পড়েনি।
পেছনে বর যাত্রীরা কেমন করে গন্তব্যের পথে নবীন, প্রবীণ, তরুণ, তরুণী, বালক-বালিকারা পুরনো দিনের গল্প আর হৈ-হুল্লোড় আর দুষ্টুমিতে আনন্দধারা চলার দৃশ্য দেখেছি, তা এখনও মনে পড়ে। পালকি যখন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় তখন কাঁচা-মাটি, কখনও আলপথ, কখনও মেঠোপথে হেঁটে চলতো ।
বরকে যখন পালকিতে বেহারারা বহন করে নির্দিষ্ট ছন্দের তালে তালে, তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে পা ফেলে চলতো। তখন মন কেড়েছে। তার অনুভূতি এখনও অনুভব করে।
গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য পালকি ব্যবহারের নিয়ম প্রথা চালু ছিল। তবে প্রকৃতি থেকে একেবারে বিলীন না হলেও হয়তো কোথাও কোথাও এখনও টিকে আছে। ধারণা করে যেতে পারে বিলুপ্তির পথে। কোনো রকমে বেহারাদের জীবন ও জীবিকা চলত।
তবে বেহারারা বাপ-দাদার নিয়ম প্রথা এখন আর মানছে না, ভিন্ন পেশায় জীবন চলে। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন পালকি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। পালকি এখনও কোথাও কোথাও দেখা যায় না।
বর্তমান যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ,আর মানুষ এখন প্রযুক্তির আবিস্কারের ফলে, অনেক যান্ত্রিক পরিবহন তৈরি করেছে।তাই মানুষ এখন বিয়েতে বাড়িতে বিভিন্ন পরিবহনের বাহন হিসাবে ব্যবহার করছে,হেলিকপ্টার, মাইক্র গাড়ি, বাইক, বাস ইত্যাদি।
ফলে এখন আর চোখে পরে না সেই ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পালকি।অথচ এই পালকির একটি সুবিধা হলো,এতো কোন জ্বালানি লাগে না,ফলে কোন ধোঁয়া হয় না,ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না,এটি মানুষ কাঁধে নিয়ে হেটে যায় ,যার কারনে এতে তেমুন কোন দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকে না,এটি পরিবেশবান্ধব একটি বাহন ছিল। যুগের পরিবর্তনে,ও প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে,আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পালকি হারিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির কাছে।
Leave a Reply