ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রি.
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। সত্যিই তাই। বিপদে মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তেমনি করোনায় মৃত ব্যক্তিদের পাশে যখন কেউ ছিলেন না, বাবা-মা ছেড়ে গেছেন সন্তানকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, সন্তান বাবা-মাকে। তখন অনেকের মত পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। নিজের পরিবার, নাওয়া-খাওয়া, জীবন-জীবিকা সব ভুলে এগিয়ে এসেছেন মানবতার কল্যাণে। তারা মৃতের গোসল দিয়েছেন, জানাযা পড়িয়েছেন, কবর দিয়েছেন, সৎকার করেছেন। জনকল্যাণ ও সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ মানবতার এমন মহান ফেরিওয়ালা ও মহৎ হৃদয়বান এ অগ্রণী যোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা জানিয়েছে পুলিশ পরিবারের নারীদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)’।
পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার সভাপতিত্বে রাজধানীর রমনায় পুনাক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। জীশান মীর্জা বলেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে যারা করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকার করেছেন তাদের মত মহৎ ব্যক্তিদের সম্মাননা জানাতে পেরে পুনাক গর্ববোধ করছে।
তিনি বলেন, করোনায় যখন সারা পৃথিবী স্থবির হয়ে গিয়েছিলো তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইজিপি মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় সকল পুলিশ সদস্য রাস্তায় নেমে এসেছেন। তারা মানবসেবায় ব্রতী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনায় দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত পুলিশের ৮৬ জন অকুতোভয় সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, কোভিড চিকিৎসায় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। কোভিড ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
পুনাক সভানেত্রী বলেন, করোনাক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন আপনজনরা পাশে ছিলেন না তখন আপনাদের মত পুলিশ সদস্যরাও জানাজা পড়িয়েছেন, দাফন/সৎকার করেছেন। তিনি মানব কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য সকল দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে মোট ১৯ জন স্বেচ্ছাসেবীকে সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
পুনাকের প্রচার ও সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা নাসিম আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এসবি’র অতিরিক্ত ডিআইজি রখফার সুলতানা খানম এবং সমাজ সেবক সায়কা শারমিন।
অনুষ্ঠানে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন/সৎকারে সহায়তাকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে যে সকল অপ্রীতিকর ও অসহযোগিতাপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তা বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, কোনো জাগতিক প্রাপ্তির আশায় তাঁরা এ কাজ করেননি বরং নিজস্ব তাড়না ও ধর্মীয় আবেগের জায়গা থেকে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন।
অনুষ্ঠানে পুনাকের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথি প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক অনুদান তুলে দেন।
উল্লেখ্য, সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ করোনাকালে লাশ দাফন/সৎকার, অসহায় পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ, টেলিমেডিসিন প্রদান ইত্যাদি সেবা প্রদান করেছেন।
Leave a Reply