বরিশালের বাকেরগঞ্জ অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে শর্ত না মেনেই। অল্প উচ্চতার ড্রামসিটের চিমনির ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে বেশি উচ্চতার ইটের চিমনি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সরকারের এ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাকেরগঞ্জ অনেক ইটভাটার মালিক এ আদেশ মানছে না। এখনও অল্প উচ্চতার ড্রামসিটের এবং ইটের চিমনি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
বাকেরগঞ্জ ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ গড়ে উঠেছে কলসকাঠি ইউনিয়নের বন্দর শহরের কোল ঘেঁষে। বন্দর শহরের হাট বাজার মার্কেট সহ প্রায় এক হাজারের উপর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও কলস কাঠি ইউনিয়ন ডিগ্রী কলেজ। এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর দূরত্ব না মেনে অবৈধ ইটভাটা নির্মাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী বিভিন্ন রকমের শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে। স্থানীয় লোকজন কয়েকবার বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও ভ্রুক্ষেপ নেই যেন কারো। আবাদী জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটার কারণে গোটা এলাকা বিষিয়ে উঠেছে। যাতায়াতের রাস্তাটি ইটভাটার দখলে চলে গেছে। প্রচণ্ড ধুলোর কারণে কোনো যানবাহনও আর এ রাস্তায় চলাচল করে না। ইটভাটা গুলোতে কাঠের লাকরি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে দিনে দিনে বন জঙ্গল শুন্য হচ্ছে। নির্গত কালো ধোয়ার কারণে পশু পাখি শুন্য হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে।
কলসকাঠি প্রতিবছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। ভাটা স্থাপনে লাইসেন্স গ্রহণের কথা থাকলেও মালিকরা তা আমলে নিচ্ছেন না। প্রশাসনের সামনে ইটেরভাটা স্থাপন করা হলেও কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না। এই বছরের মধ্য ডিসি রোড কয়েকটি অবৈধ ইটভাটায় জরিমানা করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণ দেখিয়ে নিশ্চুপ থেকেছে কর্তৃপক্ষ।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার কথা। অথচ কলসকাঠি কোনো ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছেন না। আর যেসব ইটভাটা চালু রয়েছে তার অধিকাংশ মালিকই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করেই বছরের পর বছর ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা জায়, পুরো উপজেলায় কিছু ইটভাটা মালিককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিছু ইটভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। বাকি অধিকাংশ ইটভাটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ওই ইটভাটা মালিকরা তা আর নবায়ন করেননি। সরোজমিনে ঘুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশই জেলা প্রশাসনের কাছে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য এখনো আবেদন করেননি।
আজকের প্রথম সকাল পত্রিকার অনুসন্ধানী একটি টিম অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন,
কলসকাঠি ইউনিয়নের বাগিদা গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডে গাজি ব্রিকস,পুর্ব বাগিদা ৬ নং ওয়ার্ডে একতা ব্রিকস,শাপলা ব্রিকস, কোচ নগড় ৫ নং ওয়ার্ডে সান ব্রিকস, সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ টি ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এছাড়াও উপজেলা চরাদি ইউনিয়ন, ফরিদপুর ইউনিয়ন ও নলুয়া ইউনিয়নে প্রায় ৪০ টি ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটা রয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ সিরিয়াল গুলি সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের সাথে এম বি আর বি ও এ এস বি ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটা রয়েছে।
কলস কাঠি ইউনিয়নের ভুক্তভোগী জনগণই জানান, অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ ধরনের ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে।
Leave a Reply