কুমিল্লা জেলার সীমান্ত এলাকা বি-বাড়িয়ার বাঞ্জারামপুরে মাদক সেবনের টাকা না দেওয়ার কারণে মেয়ের কাঁচির আঘাতে এক মা রহিমা বেগম (৫০) নিহত হয়েছেন।
রবিবার সকাল ৬ টার দিকে উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের দশআনী গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গেছে, নিহত রহিমা বেগমের স্বামীর বাড়ি বি-বাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামে হলেও তার বিয়ের পর থেকেই তিনি বাবার বাড়িতেই থাকতেন, নিহতের স্বামীর নাম বাবুল মিয়া। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ঘাতক মেয়ে পাপিয়া বেগম (২৬) কে আটক করা হয়েছে।
এলাকাবাসী গণমাধ্যমকে জানায়, উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের দশআনী গ্রামের করিম মিয়ার মেয়ে রহিমা বেগমকে প্রায় ৩০ বছর আগে আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের বাবুল মিয়া বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে সংসারে অশান্তি, বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছিলেন রহিমা। তাদের দুই মেয়ে পাপিয়া ও পপি।
বড় মেয়ে পাপিয়া বেগম তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর গত দুই বছর আগে আয়ুবপুর গ্রামের ইসহাক মিয়া নামের এক যুবককে বিয়ে করেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় ইসহাক মিয়ার পরিবারের লোকজন এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তিনিও পাপিয়াদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি, পাপিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন, সেই মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পাপিয়া বেগমের কলহ লেগেই থাকতো বলে এলাকাবাসী জানায়।
পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, ২৮/০২/২০২১ইং রবিবার সকাল ৬ টার দিকে পাপিয়া তার মায়ের কাছে ইয়াবা কেনার জন্য টাকা চান, এ নিয়ে মা ও মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়, এক পর্যায়ে পাপিয়া তার মায়ের পেটে কাঁচি দিয়ে আঘাত করেন। এতে মা গুরুতর আহত হলে তাকে প্রথমে দশআনী একটি ফার্মেসীতে নেওয়া হয়। পরে তাকে
বাঞ্জারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রহিমা বেগমের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে রহিমা বেগমের ছোট মেয়ে মোছাঃ পপি বেগম বলেন, সকালে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়, উঠে দেখি পাপিয়া মায়ের পেটে কাঁচি ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ সময় আমরা দ্রæত মাকে নিয়ে স্থানীয় বাবুল ডাক্তারের ওষুধের দোকানে নিয়ে যাই, সেখানে ব্যান্ডেজ করে বাড়িতে নিয়ে আসলে তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় তখন বাঞ্জারামপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মা সেখানে মারা যায়। বাঞ্জারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
মেডিকেল অফিসার আতাউর করিম গণমাধ্যমকে জানান, রহিমা বেগমকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন।
এ বিষয়ে বাঞ্জারামপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজু আহমেদ গণমাধমকে বলেন, মেয়ের কেঁচির আঘাতে মা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে ঘাতক পাপিয়াকে আটক করেছি, এবং নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের দাবি-এই পরিবারের অনেকেই মাদক সেবন করেন। সূত্র জানায়, ওই এলাকা মাদক সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। উক্ত পাপিয়া বেগমের মত অনেক নারী এখন মাদকের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন, মেয়ে হয়েও বাবা মাকে হত্যা করার ঘটনা নতুন কিছু না। দেশের প্রতিটি নাগরিক সচেতন হতে হবে, মাদককে না বলুন।
Leave a Reply