
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর মিরপুরে লাজফার্মার একটি গুরুতর ভুলের পর দীর্ঘ এক মাস ধরে ধানমন্ডীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন খালেদা আক্তার রিনা (৪৫)। অভিযোগ অনুযায়ী, তার প্রেসক্রিপশনে থাকা Methoflex 500 mg এর পরিবর্তে ভুলবশত সরবরাহ করা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন গ্রুপের শক্তিশালী কেমোথেরাপি-জাতীয় ওষুধ Methotrexate 10 mg—একটি পুরো পাতায় ১০টি ট্যাবলেট। ওষুধ সেবনের পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।
মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশের কামাল হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রিনা ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে শাহ আলী থানার রাইনখোলা মোড়ের লাজফার্মা থেকে নির্দেশিত ওষুধ কেনেন। ভুল ওষুধ গ্রহণের পর তার লিভার–কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাথার চুল ও ভ্রু দ্রুত ঝরে যেতে থাকে। অবস্থা অবনত হলে ১ নভেম্বর তাকে প্রথমে মিরপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়; সেখান থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ধানমন্ডী গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পর লাজফার্মার ম্যানেজার মো. ওবায়দুল কয়েকবার হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। তবে ৫ নভেম্বর রিনাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তরের পর তাদের আচরণ পরিবর্তন হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে জানতে ১১ নভেম্বর রিনার পরিবার লাজফার্মায় গেলে ম্যানেজার ওবায়দুল এবং পরিচালক বেলালের ভাই জিলাল তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং বাকি চিকিৎসা ব্যয় বহনে অস্বীকৃতি জানান। পরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিচালক আকবর ও বেলাল চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
১২ নভেম্বর ফেয়ারপ্লাজার ১০ম তলায় এক ডেভেলপারের অফিসে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সাদা কাগজে একটি সমঝোতাও লিখিত হয়—যেখানে অতিরিক্ত চার লাখ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন লাজফার্মা কর্তৃপক্ষ। তবে পরিবার জানায়, এ পর্যন্ত সেই টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
বরং লাজফার্মার ম্যানেজার ওবায়দুল রিনার পরিবারের বিরুদ্ধে “চাঁদাবাজির অভিযোগে” শাহ আলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই রুবেল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাইনখোলা মোড়ের লাভজনক লাজফার্মার সাইনবোর্ডটি কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে উচ্চ মূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতি মাসে মূল মালিক লুৎফর রহমানকে বিপুল অঙ্ক প্রদান করায় নৈতিকতা, ভোক্তা নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয়দের দাবি—এ শাখার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ব্যবহার ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, কিন্তু কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যায় না।
বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ খালেদা আক্তার রিনা এখনো গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরিবারের অভিযোগ—লাজফার্মার অবহেলা ও ভুলের কারণেই তার জীবন আজ সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply