শিরোনাম :
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটই সমাধান : সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ খুনের মামলার দুই আসামি গ্রেফতার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারা হাসপাতাল এখন রোল মডেল বরগুনা-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত এ্যাড. মোঃ রেজবুল কবির…! নবীনগরে পুকুর থেকে কলেজ ছাত্রীর লাশ উদ্বার আগামীতে শহীদ জিয়ার দল বিএনপিই সরকার গঠন করবে – জনসভায় এস এ সিদ্দিক সাজু শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোপালপুরে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত গলাচিপায় নদী ভাঙনে সড়ক বিলীন হওয়ার শঙ্কায় মানববন্ধন বিজিএমইএ ও স্ট্যানলি স্টেলার বৈঠক: টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় অঙ্গীকার রাঙ্গাবালীতে দশ দিনব্যাপী আনসার-বিডিপি প্রশিক্ষণ চলছে

রাবা গণহত্যা, মিশরের রক্তে লেখা এক অভিশপ্ত অধ্যায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৫১ বার পঠিত

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট—তারিখটি হয়তো ক্যালেন্ডারে নিছক আরেকটি দিন, কিন্তু মিশরের ইতিহাসে এটি খোদাই হয়ে আছে কালো অক্ষরে। কায়রোর রাবা আল-আদাওয়িয়া স্কয়ার সেদিন ভোরে ছিল মানুষের ভিড়ে, উজ্জ্বল প্রত্যাশায় আর শান্তিপূর্ণ দাবির মিছিলে পূর্ণ। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোর্সির পদচ্যুতির পর টানা ছয় সপ্তাহ ধরে সেখানে অবস্থান করছিলেন তাঁর সমর্থকরা। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এই গণপ্রতিবাদ হয়তো আবার ফিরিয়ে আনবে ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। কিন্তু সূর্য ওঠার পর অল্প সময়েই শান্তির পতাকা রঞ্জিত হয়ে গেল রক্তে, আর স্কয়ার পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সাঁজোয়া যান, ভারী অস্ত্র, এবং স্নাইপারদের নিয়ে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে মুহূর্তের মধ্যে গুলি চালাতে শুরু করল নিরস্ত্র মানুষের ওপর। সেই সকালের বাতাস কাঁপছিল ক্রন্দনে, আহতের আর্তনাদে, আর ভয়ের সেই শীতল স্রোতে যা প্রতিটি বুক কাঁপিয়ে তুলছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, শুধু রাবা স্কয়ারেই কমপক্ষে ৮১৭ জন নিহত হন, বহু প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। কাছাকাছি নিজাতাহ স্কয়ারেও একই রকম হত্যাযজ্ঞ চলছিল, লাশের সারি আর রক্তে ভিজে যাওয়া রাস্তাগুলো হয়ে উঠেছিল নীরব সাক্ষী।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই ঘটনাকে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ছিল পরিকল্পিত, সুসংগঠিত এবং রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হত্যাযজ্ঞ—যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। কিন্তু এই নৃশংসতার এক দশক পেরিয়ে গেলেও কোনো বিচার হয়নি, দায়ীদের একজনও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়নি। বরং রাবার সেই দিন যেন বৈধতা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় দমননীতিকে, তৈরি করেছে ভয় ও নীরবতার সংস্কৃতি।

রাবা গণহত্যা মিশরের জন্য কেবল একটি দিনের স্মৃতি নয়—এটি এক প্রজন্মের মনে খোদাই হয়ে যাওয়া ভয়, ক্ষোভ ও অবিচারের প্রতীক। এর পরবর্তী বছরগুলোতে দেশজুড়ে শুরু হয় ভয়াবহ দমনপীড়ন—গণগ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, এবং সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ। আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই দশ বছরকে আখ্যা দিয়েছে “অপরাধহীনতার দশ”—যেখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে জেল, গুম, অথবা মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া।

আজও রাবার রক্তমাখা সকাল মিশরের রাস্তাঘাটে অদৃশ্য ছায়ার মতো ভেসে বেড়ায়। যাদের প্রিয়জন হারিয়ে গেছে, তারা এখনও অপেক্ষা করছেন ন্যায়বিচারের জন্য—যদিও জানেন, এই অপেক্ষা দীর্ঘ, কণ্টকাকীর্ণ, এবং হয়তো প্রজন্ম পেরিয়েও শেষ হবে না। রক্তে রঞ্জিত সেই দিনের স্মৃতি এখন ইতিহাসের অমোচনীয় দাগ, যা মনে করিয়ে দেয়—যখন রাষ্ট্র নিজ জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন তা কেবল হত্যাযজ্ঞই নয়, মানবতার প্রতি এক স্থায়ী বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে ওঠে।

লেখক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com