
মোঃ বাবুল ময়মনসিংহ জেলা ব্যুরো প্রধান
সুরা ইউনুসের ৬২তম আয়াতের বাণী অনুযায়ী,
“আলা ইন্না আউলিয়া আল্লাহ লা খাউফুন আলাইহিম ওয়ালাহুম ইয়াহযানুন”
“জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”
এই বাণী যুগে যুগে মানুষের অন্তরে আধ্যাত্মিক শান্তি, নিরাপত্তা ও আশার আলো জ্বালিয়ে এসেছে।
ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক লালকুঠি পাক দরবার শরীফ আজও সেই আধ্যাত্মিক আলোর ধারাকে জীবন্ত রাখছে। হুজুরদের ছোট আওলাদ, আলাউল হক অলি হুজুর পাক, প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর হাজারো মানুষের জন্য বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এবং আধ্যাত্মিক পরামর্শ প্রদান করেন। সারাদিন কাঠের চেয়ারে বসে মানুষকে সেবা করা—এ যেন তার জীবনধর্ম, তার ইবাদত।
দরবারে আগত মুসল্লিরা জানান, হুজুরের সামনে বসতেই এক অদৃশ্য প্রশান্তি বুক ভরে আসে। ক্ষমা প্রার্থনার সময় চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে, মন নরম হয়ে যায় এবং আত্মা যেন হালকা হয়ে ওঠে। জুম্মার দিনে নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষ নামাজ শেষে হুজুরদের দোয়া গ্রহণে ভিড় করেন—এ দৃশ্য যেন আধ্যাত্মিকতার এক জীবন্ত মেলায় পরিণত হয়।
এই দরবার শুধু একটি আধ্যাত্মিক পবিত্র স্থাপনা নয়—এটি মানুষের কল্যাণ, নৈতিকতা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র। হুজুরদের জীবন ছিল আত্মত্যাগ, বিনয় ও সেবার আলোয় আলোকিত। বিশেষত, সিরাজগঞ্জের আগত মাওলানা খাজা মুহাম্মদ ছাইফুদ্দীন হুজুর পাক এবং খাজা সুজাউদ্দৌলা সোজা হুজুর পাক দরবারের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলকে আরও শক্তিশালী করে মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে এসেছেন।
খাজা সাইফুদ্দিন হুজুর পাক ইন্তেকাল করেছেন।
তবে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি, আদর্শ এবং আধ্যাত্মিক প্রভাব আজও জীবন্ত। তার পুরো জীবন ছিল আধ্যাত্মিকতা ও মানবসেবায় নিবেদিত।
স্থানীয়দের ভাষায়—
“উনার জীবনে বহু কেরামত আছে।”
কোনো বিশেষ ঘটনা উল্লেখ না করেও মানুষ বলে, তার দোয়া ও উপস্থিতির বরকতে বহু হৃদয় শান্তি পেয়েছে, বহু পরিবারে এসেছে স্বস্তি ও আশা। মানুষ আজও সেই আধ্যাত্মিক প্রভাবকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করে।
ছোট হুজুর পাক, আলাউল হক অলি হুজুর পাক, মুরিদ ও মুসল্লিদের মাঝে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি এবং জীবনের কল্যাণের উদ্দেশ্যে নিয়মিত লিচু ও আমের চারা বিতরণ করেন এবং মাছের পোনা তুলে দেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দরবারে আসা মানুষরা শুধু আধ্যাত্মিক প্রশান্তি নয়, পরিবেশ সচেতনতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করেন।
দরবারে সব সময় জিকির, দোয়া, আধ্যাত্মিক আলোচনা ও নৈতিকতার শিক্ষা চলতে থাকে। এখানে কোনো প্রেমগীতি, বিনোদন বা দুনিয়াবি কর্মকাণ্ডের স্থান নেই—বরং পুরো পরিবেশটি সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আবহে ভরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লালকুঠি পাক দরবার আজ মানুষের ভয়, দুঃখ, মানসিক অস্থিরতা ও জীবনের জটিলতা দূর করার এক আলোকস্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ এখানে শান্তির খোঁজে আসে, আর ফিরে যায় হৃদয়ে আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রেরণা ও প্রশান্তি নিয়ে।
Leave a Reply