শিরোনাম :
ভোলায় জলসিড়ি সাহিত্য আসরের চতুর্থ আড্ডা অনুষ্ঠিত । মনপুরায় জেলেকে মারধর, বিচার না পেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিবি কর্তৃক ৯০ বোতল স্কফ সিরাপ ও ০১টি মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ ০২ জন মাদক কারবারী গ্রেফতার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিবি কর্তৃক ৭৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ০১ জন মাদক কারবারী গ্রেফতার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪০ বোতল দেশী চোলাই মদ সহ ২ জন গ্রেফতার। সাউথ এশিয়ান এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বিএনপি নেতা আলহাজ্ব ইউসুফ মেম্বার গলাচিপায় ৩৮ বছর পর হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার নবীনগরে নিরাপদ খাদ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ কর্মশালা  ডিমলায় বন্যায় উদ্ধারের নৌকা রেসকিউ বোট, অযত্নে অবহেলায় অচল হয়ে পড়েছে চাটমোহরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত

সাংবাদিকতা দলবাজির জন্য নয়, সত্যের পক্ষে — প্রকৃত সাংবাদিক হবেন দেশ ও জনতার কণ্ঠস্বর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩০ বার পঠিত

✍️ লেখক: মোঃ মাহিদুল হাসান সরকার

সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)।
সাংবাদিকতা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অমূল্য অর্জন। এটি কেবল সংবাদ পরিবেশনের কাজ নয়; বরং সমাজকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার, জাতিকে সত্য জানানো এবং রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালিত করার এক মহান দায়িত্ব। একজন প্রকৃত সাংবাদিকের কলম সাধারণ মানুষকে ন্যায়, সত্য ও সততার আলোয় আলোকিত করে। তাঁর দায়িত্ব শুধু খবর প্রকাশ নয়; বরং মানুষের অদেখা কষ্ট, অবহেলিত শ্রেণির বেদনা এবং শোষিত জনগণের আর্তনাদ সমাজের সামনে তুলে ধরা।

প্রকৃত সাংবাদিক জনগণের মুখপত্র। তিনি জনগণের পক্ষে কথা বলেন, শাসকের নয়। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে কলম চালান। তাঁর কাজ হচ্ছে—অসত্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করা।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে সাংবাদিকতা মাঝে মাঝে দলবাজির রঙে রঞ্জিত হয়। ক্ষমতার সঙ্গে সখ্য, দলীয় প্রভাব বা ব্যক্তিস্বার্থকে সামনে রেখে যখন সাংবাদিকতা পরিচালিত হয়, তখন এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। সংবাদ হয়ে ওঠে পক্ষপাতদুষ্ট, সত্য হারিয়ে যায় এবং জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।

বিশেষ করে ৫ই আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এ বিষয়টি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা দেখেছি—যারা দীর্ঘদিন ধরে দলীয় ব্যানারের আড়ালে সাংবাদিকতা করেছেন, ক্ষমতার সঙ্গে আঁতাত করে জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত জনগণের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেননি। কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কেউবা হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন। অনেকে আজও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই বাস্তবতা আমাদের সামনে এক অমোঘ সত্য হাজির করেছে—সাংবাদিকতা কখনো দলীয় ব্যানারের ভিত্তিতে টিকে থাকতে পারে না। জনগণের আস্থা হারানো মানে সাংবাদিকতার মৃত্যু।

সাংবাদিকতা কোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা নয়। এটি একটি সম্মানের পেশা। একজন সাংবাদিক যখন কলম ধরেন, তখন তিনি শুধু লিখন করেন না; তিনি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার তৈরি করেন। এই কলম হতে হবে সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং সাহসী। ব্যক্তিগত সম্পদ, পদ কিংবা ক্ষমতার লোভ এই পেশার সঙ্গে কখনো মানায় না।

সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র হলো—
১. সত্য বলা
২. অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো
৩. ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা

যেখানে মিথ্যা প্রচার হয়, সেখানে সাংবাদিকের কলম হতে হবে প্রতিবাদের বজ্রধ্বনি। যেখানে মানুষ বঞ্চিত, নিপীড়িত, শোষিত, সেখানে সাংবাদিকের দায়িত্ব সেসব মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়া।

৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান কেবল রাজনৈতিক ইতিহাস নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসেও এক অমোঘ শিক্ষা রেখে গেছে। যারা দলীয় ছত্রছায়ায় থেকে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার তোষণ করেছেন, তারা আজ জনগণের কাছে কলঙ্কিত। সত্যকে চাপা দিয়ে কখনো জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যতই মিথ্যা চাপানো হোক না কেন, একদিন সত্য গর্জন করে ওঠে।

এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত—যদি সাংবাদিকতা দলীয়করণ হয়, তবে সেটি স্থায়ী নয়। সত্য ও নিরপেক্ষতা ছাড়া সাংবাদিকতা টিকতে পারে না।

প্রকৃত সাংবাদিক হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে।
১।নিরপেক্ষতা,কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রতি পক্ষপাতিত্ব নয়; সত্যের পক্ষেই দাঁড়াতে হবে।
২। সাহস, প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। ক্ষমতাবানদের ভয় না পেয়ে জনগণের সত্য তুলে ধরতে হবে।
৩।সততা,ঘুষ, প্রলোভন বা ব্যক্তিস্বার্থ উপেক্ষা করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কলম চালাতে হবে।
৪। দেশপ্রেম,সাংবাদিকতা শুধু খবর পরিবেশনের কাজ নয়, এটি জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব। প্রকৃত সাংবাদিক তাই দেশ ও জনগণের কল্যাণকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেন।

যখন সাংবাদিকতা দলবাজির কবলে পড়ে, তখন সংবাদ হয়ে ওঠে বিকৃত, আংশিক ও একপেশে। জনগণ গণমাধ্যমের ওপর থেকে আস্থা হারায়। গণমাধ্যম তখন প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়, সত্যের আয়নায় নয়।

এতে সাংবাদিকতার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, সমাজ বিভ্রান্ত হয় এবং জাতি ভুল পথে পরিচালিত হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব ভয়াবহ। সাংবাদিকরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, স্বাধীনতা হারান এবং জনগণের কাছে অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

আজকের তরুণ সাংবাদিকদের জন্য বড় শিক্ষা হলো–সাংবাদিকতা কখনোই দলীয় ব্যানারে বন্দী করা যাবে না। সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য হতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণ। সত্য, ন্যায় ও সাহসী কলমকে গ্রহণ করতে হবে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে।

ইতিহাসে টিকে থাকেন সেই সাংবাদিকই, যিনি জনগণের পক্ষে নিরপেক্ষ ও সাহসের সাথে কলম চালান। দলবাজি, প্রলোভন কিংবা ভয়ের কাছে নতি স্বীকারকারী সাংবাদিকের কোনো স্থান ইতিহাসে নেই।

সাংবাদিকতা কেবল সমালোচনার নাম নয়।
এটি পরিবর্তনের বার্তা, উন্নতির দিকনির্দেশনা এবং মানুষের মাঝে আশা জাগানোর অঙ্গীকার। একজন প্রকৃত সাংবাদিক সমাজের শিক্ষক, পথপ্রদর্শক ও আলোকবর্তিকা।

যদি সাংবাদিকতা ভালোবাসা দিয়ে করা যায়, তবে সেটি হয়ে ওঠে জনতার অনুপ্রেরণা। যদি সাংবাদিকতা নিরপেক্ষভাবে করা যায়, তবে সেটি হয়ে ওঠে জাতির শক্তি। আর যদি সাহসের সাথে করা যায়, তবে সেটি হয়ে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য ঢাল।

সাংবাদিকতা কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির জন্য নয়; এটি সমগ্র জাতির জন্য। যে সাংবাদিক অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না, সে বর্তমানের কাছে শাস্তি পায়। আর যে সাংবাদিক সত্যকে আঁকড়ে ধরে রাখে, সে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের প্রতিটি সাংবাদিক নিরপেক্ষ, সৎ ও সাহসী হয়ে উঠুক—এটাই আমার প্রত্যাশা। কলম হোক ভালোবাসার, সত্যের এবং জনগণের জন্য এক অবিনাশী শক্তি।

কারণ—সাংবাদিকতা দলবাজির জন্য নয়, সত্যের পক্ষে। প্রকৃত সাংবাদিক হবেন দেশ ও জনতার কণ্ঠস্বর।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com