ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাতক্ষীরায় আসছেন।
এলক্ষে দিল্লি থেকে মোদির নিরাপত্তা দলের সদস্যরা সাতক্ষীরা সরজমিন ঘুরে গেছেন।
যশোরেশ্বরী মন্দিরের অবকাঠামো, যাতায়াত, নিরাপত্তাসহ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা।
আগামী ২৬শে মার্চ সকালে ঢাকা আসছেন মোদি বিকালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর যৌথ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন তিনি।
মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজনে অংশীদার হতে আসছেন ভারতের এই সরকার প্রধান।
২৬ মার্চ প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক দ্বিতীয় দিন ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করতে টুঙ্গিপাড়া যাবেন, সেই সুবাদে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতেও যাবেন তিনি।
সফর সূচি অনুযায়ী গোপালগঞ্জ থেকে বরিশাল হয়ে তার ঢাকা ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বরিশাল উজিরপুরের শিকারপুরস্থ সুগন্ধা শক্তিপীঠের বদলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে যেতে বেশি আগ্রহী তিনি।
তাই সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ইশ্বরীপুরে ঐতিহ্যবাহী যশোরেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এছাড়া কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুঠিবাড়ী ও দর্শনের ইচ্ছে রয়েছে।
উইকিপিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশ তথা উপ-মহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এর নামকরণেরও বিশেষত্ব আছে। যার অর্থ দাঁড়ায় ‘যশোরের দেবী’। এটি একটি তীর্থস্থান। মন্দিরটির গুরুত্ব ও ইতিহাস বর্ণনায় বিভিন্ন মিথ চালু আছে। ধারণা করা হয় যে, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের ১০০টি দরজা নির্মাণ করেন। কিন্তু মন্দিরটি কখন নির্মিত হয়েছে তা আজও অজানা।
লক্ষ্মণ সেন ও প্রতাপাদিত্য কর্তৃক তাদের রাজত্বকালে এটির সংস্কার হয়েছিল। কথায় আছে যে মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি এখানকার জঙ্গল থেকে একটি অলৌকিক আলোর রেখা বের হয়ে মানুষের হাতের তালুর আকারের একটি পাথরখণ্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্য কালীর পূজা আরম্ভ করেন এবং এই কালীমন্দিরটি নির্মাণ করেন।
জমিদার বাড়িতে অবস্থিত যশোরেশ্বরী মন্দিরের যশোরেশ্বরীর কণ্ঠের নিচে তার শ্রীহস্ত ও শ্রীচরণ কিছুই নজরে পড়ে না। মূর্তির অবয়ব পুরোটাই মখমলে আবৃত। মাথার ওপর টকটকে লাল রঙের চাঁদোয়া। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলংকার। মাথায় সোনার মুকুট। লালজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি। পশ্চিমবঙ্গের মালদার জাগ্রত জহুরা কালীমূর্তির মুখমণ্ডলের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে যশোরেশ্বরীর।
মন্দিরের সামনে তিনদিন মেলা বসে যেখানে, যেখানে হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যোগ দেন। মূল মন্দির সংলগ্ন স্থানে নাটমন্দির নামে একটি বৃহ মঞ্চমণ্ডপ ছিল। কথিত আছে এটি লক্ষ্মণ সেন বা মহারাজা প্রতাপাদিত্য ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর এটি ভেঙে পড়ে। সেই সুদৃশ্য, লম্বা-চওড়া বিরাট নাটমন্দিরের এখন শুধুমাত্র স্তম্ভগুলোই দেখা যায়। দু-একটা স্তম্ভ কয়েকশ’ বছরের নীরব সাক্ষী হয়ে ইটের পাঁজর বের করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো রকমে। মন্দিরটির চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ছিল। কিন্তু মূল মন্দিরটি বাদে আজ অনেক কিছুই কালের গর্ভে বিলীন। মন্দিরের নওবতখানা এখন ভগ্নস্তূপ। অবশ্য ধর্মীয় এবং প্রতœতাত্ত্বিক ওই স্থাপনার সংস্কারে বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা গতকাল সকালে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাতক্ষীরা সফর প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসককে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সভায়ও তার যোগদানের কথা রয়েছে।
Leave a Reply