সেলিম চৌধুরী,পটিয়াঃ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র সহসভাপতি বিশিষ্ট নারী নেএী সমাজ সেবিকা কাউন্সিলর জেসমিন খানম বলেছেন,সোশ্যাল মিডিয়ার কবল থেকে তরুন ও যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির অনবদ্য আবিষ্কার হলো সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, উইচ্যাট, পিন্টারেস্ট, স্ন্যাপচ্যাট, টাম্বলার ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। বর্তমান বিশ্বে ২৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩৪২ কোটি মানুষের মধ্যে ৫২ শতাংশের বেশি মানুষ মাসে একবার হলেও ফেসবুকে প্রবেশ করে থাকেন। বাংলাদেশেও এর ব্যবহারকারী কম নয়। বর্তমান বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন।এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই অধিক। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩-১৯ বয়সের ছেলে- মেয়েদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ফেসবুক ব্যবহার করেন। মুদির দোকানে কাজ করা ছেলে থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররাও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। প্রতিদিনের বড় একটা সময় তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেষ করছে, ফলে তাদের অলসতার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ইতিপূর্বে তরুণদের মাঠে খেলতে দেখা যেত, কিন্তু বর্তমান সময়ের তরুণ সমাজকে মাঠে দেখা যায় না। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমান সমাজের তরুণরা এটাকেই বিনোদনের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। সেখানে তারা পরস্পর চ্যাট করছে, আড্ডা দিচ্ছে, নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। ফলে ব্যক্তি যোগাযোগ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অলস সময় কাটানোর ফলে প্রতিনিয়ত তাদের কর্মক্ষমতা হরাস পাচ্ছে।
অন্যদিকে তারা যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করে, তখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে এবং অধিক সময় রাত জাগে। যার কারণে ঘুম কম হয় এবং মানসিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয়। ফলে স্কুল-কলেজে যেতে চায় না, পড়া-লেখায় মনোযোগ দিতে পারে না। এভাবে তাদের সৃজনশীলতার সক্ষমতা ধীরে ধীরে হরাস পেতে থাকে। যার দরুন পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়। ফলে তাদের মানসিক চাপ আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারা নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। মনে খারাপ চিন্তার উদ্রেগ ঘটে যা তরুণদের অপরাধের দিকে ধাবিত করে।আবার, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন মেয়ে বন্ধু পাওয়া যায়, তেমনি ছেলে বন্ধুও। তাদের এই পারস্পরিক আলাপচারিতা ও যোগাযোগের ফলে তাদের আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। গড়ে ওঠে এক অবৈধ সম্পর্কের। আর সেই অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও বা ছবি ক্যামেরায় ধারণ করে পরবর্তীতে বস্ন্যাকমেইলের মতো ঘটনা ঘটে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত এমন অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় তরুণরা এমন সব ওয়েবে প্রবেশ করে, যা পেশাদার নারী-পুরুষের রঙ্গলীলায় ভরপুর রয়েছে। ফলে তাদের বাস্তব জীবনে জৈবিক চাহিদা বিকৃত হচ্ছে এবং মানসিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এতে সমাজের নিকৃষ্ট কাজ করতেও তাদের মনে কোনো দ্বিধার সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে তাদের দ্বারা সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যা কখনোই কাম্য নয়।আমাদের তরুণ সমাজকে এসব অপরাধ এবং অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে ও রুখতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি এবং মাত্রাতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার থেকেও দূরে রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরিবারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তাছাড়া আমাদের সাইবার আইনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকরী করে তুলতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তরুণ সমাজকে উপরোক্ত কাজগুলো থেকে বিরত রাখা সম্ভব।
Leave a Reply