শিরোনাম :
জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেলেন মোজাম্মেল হোসেন বাবু ধামরাইয়ে বিজ্ঞান মেলা নীলফামারী সদরে বিসমিল্লাহ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে সাড়ে ৬২ লাখ টাকার কো*কেন ও হি*রোইন জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (৫৬ বিজিবি) নীলফামারী। রাজশাহীতে হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা কোটচাঁদপুরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় জনগণের রোষানলে সাব রেজিস্ট্রার ঝিনাইদহে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট দিতে গিয়ে ভোটারের মৃত্যু Daily Detectivenews কেরানিগজ্ঞের বিপুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ গোদাগাড়ীতে ৪০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার মিরপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ শাহজাদপুরে মসজিদের সাধারণ সম্পাদকের কাছে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদা দাবির অভিযোগ

আগামী ১১ই মার্চ মুসলমানদের একটি বিশেষ দিন “শবে মেরাজ”

স্টাফ রিপোর্টার :মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১
  • ৭৫৫ বার পঠিত

মুসলমানদের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিন রয়েছে তার মধ্যে শবে মেরাজ রজনী হলো একটি বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য পূর্ণ দিন।
যা আগামী ১১ ই মার্চ রোজ বৃহস্পতিবার পালিত হতে যাচ্ছে। এদিন বিশ্বের সকল মুসলমানরা ইবাদতে মগ্ন থাকেন। এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। পতিত আছে দুজাহানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম মেরাজের রাতে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং আল্লাহ তায়লা তার উম্মতের জন্য একটি উপহার দিয়েছিলাম সেটি হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যা মুসলমানরা দৈনিক পাঁচ বার এ ইবাদত আদায় করে থাকেন।
ইসলাম ধর্মমতে, নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির একাদশ বছরের (৬২০ খ্রিস্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে হযরত জিবরাইল (আ.) এর সাথে বোরাকে চড়ে পবিত্র কাবা থেকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তম আকাশের ওপর আরশে আজিমে আল্লাহর দিদার লাভ করেন।
মুসলিমরা এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এ রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এ মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এ রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ (সা.)।

হাদিসে বলা হয়েছে, রজব মাসের শুরু থেকে নবী করিম (সা.) মুসলমানদের বেশি বেশি নেক কাজ করার তাগিদ দিতেন। রজব ও শাবান মাসের পরেই আসে রমজান মাস। এ জন্য রাসুল (স.) মুসলমানদের বেশি বেশি একটি দোয়া পড়তে তাগিদ দেন, তা হলো- ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান কর, আর রজমান পর্যন্ত আমাদের হায়াতকে বৃদ্ধি করে দাও।
পবিত্র শবে মেরাজ,করণীয় ও ফজিলত:-
মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এ রাত। এ রাতে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) স্বর্গীয় বাহন বোরাকে চেপে ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজের বিধানও করা হয় এ মহিমান্বিত রাতে। ইসলাম
ধর্মাবলম্বীদের কাছে রাতটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শবে মেরাজের রাতে যা ঘটেছিল তা মুসলমানদের বিশ্বাস করা ইমানি দায়িত্ব। এ রাতেই সপ্তম আসমান পেরিয়ে আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে
সরাসরি কথোপকথন শেষে পৃথিবীতে
ফিরে আসেন হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)। প্রথমে মদিনা মুনাওয়ারা, তারপর সিনাই পর্বত, তারপর হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান ‘বায়তে লাহম’ হয়ে চোখের পলকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে
পৌঁছালেন। মহানবী সেখানে
আম্বিয়ায়ে কিরামের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজের জামাতে ইমামতি করলেন। তিনি হলেন ‘ইমামুল মুরসালিন’ অর্থাৎ সকল নবী-রাসুলের ইমাম। নামাজের পর জিব্রাইল (আ.)
উপস্থিত সবার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ
(সা.)-এর আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে
দেন। নৈশভ্রমণের প্রথমাংশ এখানেই
সমাপ্ত হয়।

পবিত্র কোরআনের ভাষায় মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পরিভ্রমণকে ‘ইস্রা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তারপর নবী করিম (সা.) বোরাকে আরোহণ করলে তা দ্রুতগতিতে মিরাজ বা ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা শুরু করে। বিশ্বস্রষ্টার নভোমন্ডলের অপরূপ দৃশ্য দেখে তিনি বিমোহিত হন। প্রতিটি আসমানে বিশিষ্ট নবীদের সঙ্গে তাঁর সালাম ও কুশলাদি বিনিময় হয়।
প্রথম আকাশে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে হজরত ঈসা (আ.) ও হজরত ইয়াহ্ইয়া (আ.),
তৃতীয় আকাশে হজরত ইউসুফ(আ)
চতুর্থ আকাশে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আকাশে হজরত ইবরাহিম (আ.) -এরম সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ হলে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সপ্তম আসমানে অবস্থিত ফেরেশতাদের আসমানি কাবা গৃহ বায়তুল মামুরে তিনি অসংখ্য ফেরেশতাকে তাওয়াফরত অবস্থায় এবং অনেককে সালাত আদায় করতে দেখেন। এরপর তিনি জিব্রাইল (আ.)- এর সঙ্গে বেহেশত-দোজখ পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া আলমে বারজাখের অসংখ্য দৃশ্যাবলি স্বচক্ষে অবলোকন করে পুনরায় সিদরাতুল মুনতাহায়
ফিরে আসেন। এভাবে সপ্তম আসমান থেকে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত এসে সফরসঙ্গী জিব্রাইল (আ.) ও ঐশীবাহন বোরাকের গতি স্থির হয়ে গেল। জিব্রাইল (আ.) এখানে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এই সীমানাকে অতিক্রম করে আমার আর সামনে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা নেই। এখানে শুধু আপনি আর
আপনার রব।’ এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-কে তাঁর স্বরূপে দেখতে পান। অতঃপর জিব্রাইল (আ.) মহানবীর সঙ্গে গমন করলেন না। এখানে তাঁর বাহনও পরিবর্তন হয়। তারপর নবী করিম (সা.) স্বয়ং ‘রফরফ’ নামক বিশেষ স্বর্গীয় বাহনে আরোহণ করে রাব্বুল আলামিনের অসীম কুদরতে
কল্পনাতীত দ্রুতবেগে ৭০ হাজার
নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে মোয়াল্লার সন্নিকটে পৌঁছালেন এবং আল্লাহর দরবারে হাজির হলেন।
মহানবী (সা.) স্থান-কালের ঊর্ধ্বে
লা মাকাম-লা জামান স্তরে পৌঁছান।
নূর আর নূরের সৌরভে তিনি অভিভূতভহয়ে যান। সেখানে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে হজরত
মুহাম্মদ (সা.)-এর দিদার এবং
কথোপকথন হয়। তিনিই একমাত্র
মহামানব, যিনি এ সফরের মাধ্যমে
আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে যান।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তাআলার
নৈকট্য, সান্নিধ্য ও দিদার লাভ করার পর জ্ঞান-গরিমায় মহীয়ান হয়ে তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবং করুণা ও শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ পুরস্কার হিসেবে আল্লাহর বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ওই রাত ও উষার সন্ধিক্ষণে আবার মক্কায় নিজগৃহে
প্রত্যাবর্তন করেন। মহানবী (সা.)-এর মিরাজ একটি বিস্ময় সৃষ্টিকারী মুজিজা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের জ্বলন্ত প্রমাণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজের অনুপম শিক্ষা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। যখন নবী করিম (সা.) জাগতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হন,ভতখন তাঁর প্রিয়তমা পত্মী উম্মুল মুমিনীন হজরত খাদিজা (রা.) ও বিপদে আশ্রয়দাতা চাচা আবু
তালিবের আকস্মিক ইন্তেকাল হয়।
অপরদিকে কাফেরদের অত্যাচার তাঁকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

তখন মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা স্বীয় হাবিবকে নিজের সান্নিধ্যে ডেকে এনে সান্ত¡না দিয়ে সমাজ
সংস্কারের একটি পরিপূর্ণ
দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

সকলের করনীয় :-
এই ফজিলতময় রাতে নফল নামাজ আদায়, রোজা পালন,রাতব্যাপী জিকির-আজকার, তাসবিহ-“তাহলিল ইবাদত-বন্দেগিসহ পবিত্র
কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া মহা পুণ্য ও সওয়াবের কাজ। পাশাপাশি পবিত্র লাইলাতুল মেরাজের তাৎপর্য, ফজিলত বর্ণনা এবং এর সত্যিকার বাস্তবতা তুলে ধরে মসজিদে মসজিদে ও বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, মিলাদ, মোনাজাত অনুষ্ঠান এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান-খয়রাত ও খাবার বিতরণ করা হলে ভালো হয়।
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
শবে মি’রাজের ফজীলত:-
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সাতাশে রজব রোযা রাখবে সে যেন ৬০ মাসের রোযা রাখল। এমনিভাবে জলিল কদরভসাহাবী হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ২৭শে রজব ইবাদত করবে তার আমল নামায় একশত বৎসরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে আর যে ব্যক্তি ঐ রাতে এ নিয়মে ১২ রাকাত নামাজ পড়বে যে, প্রত্যেক দু’রাকাতে সালাম ফিরাবে এবং ১২
রাকাত পূর্ণ হলে নিম্নোক্ত দোয়াটি
১০০ বার পড়বে।
سبحن الله والخمد لله ولااله الا الله الله اكبر ولا حول ولا قوت الا بالله العلي العظيم.

(নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন) অর্থ বুঝে পড়লে অনেক সোয়াব রয়েছে। অতঃপর যে কোন দুরুদবশরীফ ১০০ বার পড়ে দুনিয়ার জায়েজ যে কোন মাকছুদের জন্য দোয়া করবে এবং পরের দিন রোযা রাখবে। আল্লাহভতায়ালা তার ঐ মাকছুদ পূর্ণ করবেন। মি’রাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহর মহিমার কীর্তিকলাপ দেখানো। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার হাবীবকে আমার কুদরতে কামেলার আশ্চর্য আশ্চর্য নিদর্শনসমূহ অবলোকন করানো। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বন্দুকে অতীত নিকটে নিয়ে তাঁর নিদর্শনাদি বেহেশত, দোজখ, বেহেশতের নেয়ামত, দোজখের আযাব, ফেরেস্তা আসমান, আরশ, কুরশী মালায়ে আলা প্রভুতি প্রত্যক্ষ করিয়ে দেয়ার জন্য এ মি’রাজ শরীফের আয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com