তিনি এমন একজন মানুষ, যার খেলা আপনায় মন্ত্রমুগ্ধ করবে, বিষ্মিত করবে, আপনায় এক চিলতে হাসির খোরাক যোগাবে!
তিনি ফুটবল মাঠের নেতা! ঠিক যেমন কোনো এক নেতার ডাকে সহস্র জনগণ যুদ্ধে নামে; নেতা একা যুদ্ধ করেন না, কিন্তু একজনকে আগে উঠে দাঁড়াতে হয়, যেমন এক থলে বারুদের জন্য কেবল একটা স্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট!
সে স্ফুলিঙ্গের নাম, রোনালদিনহো!
রোনালদিনহো’র খেলা কেবল আপনার অনুভূতিগুলোকে নাড়িয়ে দিবে, রোনালদিনহো’র পায়ের জাদু, ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন কারিশমা আপনার মনকে বশীকরণ করবে! কিন্তু অনুভূতিকে আপনি কখনোই ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেনা না!
ফুটবল নামক খেলাটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম খেলা। আর এই সুন্দরতম খেলার অনন্য এক শিল্পীর নাম রোনালদিনহো। রোনালদিনহো কেবলই একজন ফুটবলার নন, তিনি হলেন জাদুকর। যিনি জাদুতে মুগ্ধ করেছেন মাঠের হাজারো সমর্থককে কিংবা হাজার হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর অন্য আরেক প্রান্তে ছোট্ট এক গ্রামে বাস করা কোন এক ফুটবল দেখা মানুষকে কিংবা প্রতিপক্ষের ১১ জনকেও নিজের জাদুতে বারবার বোকা বানিয়েছেন! যার পায়ের কারিকুরিতেই পাওয়া যায় সঙ্গীতের মুর্ছনা! সহজাত এই মানুষ ছিলেন একজন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, যিনি মাঠে একজন ফুটবলারের ভুমিকাকেই পালটে দিয়েছিলেন।
রোনালদিনহো’র খেলা মানে মজা, যা মানুষকে আনন্দ দিতো! মজা কিংবা আনন্দ হয়তোবা শিশুসুলভ শব্দ হয়ে গেলো; কিন্তু রোনালদিনহো মানুষটাই এমন যিনি ফুটবল নিয়ে মজা করে আনন্দ দেয়াটাকে প্রফেশন নয় প্যাশন দিয়ে নিয়েছিলেন! তিনি ফুটবল নামক গোলকটাকে ভালোবেসেছিলেন, এই ভালোবাসা আর তার ভীনগ্রহী কারুকার্য দিয়েই তিনি চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছেন, বিশ্বকাপ জিতেছেন, জিতেছেন ব্যালন ডি অর!তবে তিনি যেটা সবচেয়ে বেশি জিতেছেন, তা হলো মানুষের হৃদয়! দিনহো তে মজেছেন প্রতিপক্ষ, দিনহো তে মজেছেন প্রতিপক্ষের দর্শক! সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দর্শক যখন রোনালদিনহো কে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়, তখন আপনায় কি এই কথাটাই মনে করে দেয় না যে রোনালদিনহো কেবল এক দলের ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরো ফুটবল বিশ্বের, তিনি ছিলেন কোটি ফুটবল প্রেমীর! যিনি খেলতেন, সুখেও হাসতেন, দুঃখেও হাসতেন, কখনো লাল কার্ড পেলে তাতেও হাসতেন! যিনি সত্যিকার অর্থে ফুটবলটাকে উপভোগ্য হিসেবে নিয়েছিলেন, একই সাথে জয় করেছিলেন সবকিছু!
#মানুষ’টা দেখতে স্মার্ট না হউয়ায়, তাকে দিয়ে ব্র্যান্ডিং হবেনা সংশয়ে তাকে দলেই নিতে চায়নি কোন এক ক্লাব। অথচ মানুষটা নিজেই নিজেকে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করে ফেললেন!
একজন রোনালদিনহো ছিলেন জাগো বনিতো’র প্রকৃত রুপকার! একজন প্রকৃত শিল্পী!
রোনালদিনহো তার এক লেখায় লেখেছিলেন – “তোমার পা’য়ে ফুটবলটা আসলেই তুমি মুক্ত, একে তোমার মত করে নাঁচাও! ফুটবল’টাকে এমনভাবে খেলো, যেন তোমার কানে সুর বাজছে আর তুমি সেই সুরের তালে বলটাকে নিয়ে নাচাচ্ছো! কেনো এত সিরিয়াস হচ্ছেন?? আপনার এই খেলাটাই অসংখ্য মানুষকে সুখের পরশ দিচ্ছে!”
হার্টঅ্যাটাক করে রোনালদিনহো’র বাবা যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিল তখন তাদের কোন সামর্থ্য ছিলোনা যে তাদের ঘরে একটি ক্যামেরা থাকবে, যেখানে তিনি রেকর্ডেড বাবার আওয়াজ কিংবা হাসির শব্দ শুনতে পাবেন। রোনালদিনহো অন্যের হাসির মাঝে নিজের বাবা’র হাসি খুঁজে পেতেন। রোনালদিনহো নিজেকে বলেছিলেন, যখন তুমি হাসছো, বল নিয়ে খেলছো, তোমার বাবা তখন খুশি হয়!
ফুটবল নিয়ে মজা করে খেলা বা আনন্দে বিমোহিত করার এই দর্শনই রোনালদিনহো বানিয়েছে গ্রেট, সেরাদের মাঝে অন্যতম সেরা!
ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড তোস্তাও বলেছিলেন- রোনালদিনহো এমন একজন খেলোয়াড় যার আছে রিভেলিনহো’র মত ড্রিব্লিং স্কিল, গার্সনের মত উচ্চাভিলাষিতা, গারিঞ্চার মত স্পিরিট, জর্জিনহো’র মত গতি শক্তি, রোনালদো’র মত দক্ষতা, জিকো’র মত টেকনিক্যাল এবিলিটি, রোমারিও’র মত ক্রিয়েটিভিটি! সব মিলিয়েই কেবল একজন রোনালদো দা এস্যিস মোরেইরা! সব মিলিয়েই কেবল একজন যাদুকর রোনালদিনহো, ফুটবল নামক সুরের শিল্পী রোনালদিনহো! আজ তার জন্মদিন, তার জন্য রয়েছে আজ হাজার হাজার ফুটবল প্রেমিকদের ভালোবাসা। বেঁচে থাকুক পৃথিবী নামক গ্রহের কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীর হৃদয়ে, এক অনন্য অসাধারণ সৌন্দর্যের কারীগর হয়ে!
Leave a Reply