
মোঃ রেজাউল করিম সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সারাদেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত হাসারচর, আমদাবাদ, নতুন জাহানপুর, ও পুরাতন জাহানপুর—এই তিনটি গ্রামে। প্রায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এই গ্রামগুলোতে। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, এবং শিক্ষার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সুরমা নদী।
নদী পারাপারে দুর্বিষহ জীবন
এই তিন গ্রামের মানুষের মূল যাতায়াতের পথ হলো নদী পার হয়ে গনিগঞ্জ বাজার এবং সেখান থেকে মেইন রোড ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মস্থলে যাওয়া। ছবিটি সেই ভোগান্তির একটি দৃশ্য তুলে ধরে, যেখানে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে নদী পার হচ্ছেন।
দৈনন্দিন ভোগান্তি: নদী পারাপারের কারণে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের জীবনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
শিক্ষার্থীদের দুর্গতি: স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের নদী পার হয়ে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে প্রায়শই বিলম্ব হয়, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
স্থলবন্দর হিসেবে গনিগঞ্জ: গনিগঞ্জ বাজারকে একপ্রকার ‘স্থলবন্দর’ হিসেবে ব্যবহার করে তবেই মেইন রোডে উঠতে হয় এই গ্রামবাসীর।
ব্রিজের দাবি দীর্ঘদিনের, আশ্বাসেই কেটেছে বছর
সুরমা নদীর এই অংশে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার সরকারি কর্মকর্তারা এসে স্থান পরিদর্শন ও মাপজোক নিয়েছেন। স্থানীয় ভোগান্তিগ্রস্তদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা প্রতিবারই ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন, যা গ্রামবাসীকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছিল।
এই হাওড় অঞ্চলের উন্নয়নের রূপকার, বিগত সরকারের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাহেবও এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি তখন নোয়াখালী বাজার এবং পাথারিয়া বাজার—এই দুইটি ব্রিজের মাধ্যমে নদীর পূর্ব পাড়ের মানুষের সঙ্গে মেইন রোডের সংযোগ ঘটানোর কথা বলেছিলেন। এই ঘোষণার পর জনমনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে ব্রিজের টেন্ডার সম্পন্ন হতে চলেছে।
ভোগান্তি বাড়িয়েছে অসমাপ্ত কাজ
বর্তমানে এই এলাকার মানুষের সবথেকে বড় দুঃখের কারণ হলো রাস্তার অসমাপ্ত কাজ। দক্ষিণ দিকে পাথারিয়া বাজার থেকে একটি ব্রিজ দিয়ে নদীর পূর্ব পাড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং এই ব্রিজের সংযোগকারী রাস্তাটি শ্রীনাথপুর হয়ে পুরাতন জাহানপুর গ্রাম পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে।
কিন্তু, পুরাতন জাহানপুরের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রামগুলো—নতুন জাহানপুর, হাসারচর, আমদাবাদ ও জামলাবাদ—রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। যদিও অপর প্রান্তে জামলাবাদের সঙ্গে নোয়াখালী বাজারের ব্রিজ দিয়ে পূর্ব পাড়ের সংযোগ ঘটানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর মূল দাবি
স্থানীয়দের মতে, দুইটি ভিন্ন বাজারের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হলেও, মধ্যবর্তী এই তিনটি গ্রামের মানুষ রাস্তা না থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। তারা মনে করেন, যদি এই দুইটি বাজারের ব্রিজের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা দ্রুত নির্মাণ করে দেওয়া হয়, তবে পূর্ব পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে।
দাবি দুটি: নোয়াখালী বাজার এবং পাথারিয়া বাজারের ব্রিজের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা দ্রুত নির্মাণ করতে হবে, যাতে হাসারচর, আমদাবাদ, নতুন জাহানপুর, ও পুরাতন জাহানপুর গ্রামের মানুষের মূল রাস্তায় প্রবেশ সহজ হয়।
অন্যথায়, গনিগঞ্জ বাজার থেকে মূল নদীর উপর দিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।
এলাকার হাজার হাজার মানুষ দ্রুত এই বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপ ও ব্রিজের টেন্ডারের অগ্রগতি জানতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
Leave a Reply