আসিফ মাহমুদ (স্টাফ রিপোর্টার)
কালীগঞ্জ-ঝিনাইদহ।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্তিতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আনন্দঘন পরিবেশে ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ আয়োজন করেছে উপজেলা ও পৌর বিএনপি। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কালীগঞ্জ সরকারি ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।

শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে জনতা ব্যাংক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। রাস্তায় রাস্তায় সাধারণ মানুষের ভিড়, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের আগ্রহ এবং বিভিন্ন স্থানে ফুল ছিটানো ও করতালির মাধ্যমে শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানানো হয়। সবমিলিয়ে পুরো শহর যেন এক আনন্দমুখর উৎসবে রূপ নেয়।

দুপুর থেকেই শহরে জনতার ঢল

বিকেলের শোভাযাত্রার আগেই দুপুরের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে শুরু করে। প্রত্যেক মিছিলেই ছিল দলীয় স্লোগান, বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ও ফেস্টুন। 'দেশ বাঁচাতে হলে সরকার পতাতে হবে', 'তারেক রহমানের নির্দেশ মানি, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করি'— এমন সব স্লোগানে মুখর ছিল গোটা শহর। নেতাকর্মীদের হাতে ছিল তারেক রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টার ও ব্যানার। নারী নেত্রীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

আলোচনা সভায় সাইফুল ইসলাম ফিরোজের ঐতিহাসিক বক্তব্য

বিজয় শোভাযাত্রার আগে মাঠেই এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহবুবার রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।

তিনি বলেন: “আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই দিনে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে একটি অবৈধ দুঃশাসনের অবসান ঘটেছিল। তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা এই বিজয় শোভাযাত্রা করছি। আজকের এই শপথ হোক—ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করব।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে—কোনোভাবেই যেন বিভেদ সৃষ্টি না হয়, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে।”

শোভাযাত্রাকে ঘিরে জনমনে ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। কালীগঞ্জ শহরের প্রায় প্রতিটি মোড় ও বাজার এলাকায় উৎসুক জনতা র‍্যালি উপভোগ করতে ভিড় জমায়। বিশৃঙ্খলা রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।

কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা এই শোভাযাত্রাকে সরকারের পতনের বর্ষপূর্তি উদযাপন ও পরবর্তী আন্দোলনের মাইলফলক বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, বিএনপি আবারও গণমানুষের দল হিসেবে মাঠে সক্রিয় এবং আগাম নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ধরনের কর্মসূচি ভবিষ্যতের আন্দোলনের প্রেরণা জোগাবে।