আজহারুল ইসলাম সাদী স্টাফ রিপোর্টারঃ
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে উপকূলীয় জনপদ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও মাদরাসাগুলোকে বিনামূল্যে ১০ টন লবণ সরবরাহ করবে উপজেলা প্রশাসন, যা এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ঘটছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চামড়া দেশীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি নষ্ট না করে যথাযথভাবে সংরক্ষণে সবাইকে উৎসাহিত করতেই এই উদ্যোগ। এবছর শ্যামনগরের জন্য ১০ টন লবণ বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শ্যামনগরের ৯৫টি এতিমখানা, মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংকে এরইমধ্যে সরকারি সহায়তার বার্তা জানানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অতীতে লবণের অভাবে অনেক সময়ই চামড়া নষ্ট হয়ে যেতো। বিক্রির সময়ও মিলতো না কাঙ্ক্ষিত দাম। তবে এবার চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এবার শ্যামনগরে আট হাজারের বেশি পশু কোরবানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
শ্যামনগর পৌর এলাকার থানা মসজিদ মাদরাসার পরিচালক মুফতি আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকারিভাবে আগে কখনো লবণ পাইনি। এবার সরকারি সহায়তা পেলে সময়মতো চামড়া সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে পারবো। এতে মাদরাসার উন্নয়নে অনেকটা সহায়তা হবে।’
মাওলানা মওছুফ সিদ্দিকী জানান, চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য আগে অনেকে উদ্যোগ নিতেন না। কিন্তু এবার সরকারিভাবে লবণ দেওয়ার খবরে অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া রক্ষা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বংশীপুর শাহী মসজিদের চামড়া সংরক্ষণ কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৩০ মণ লবণের প্রয়োজন পড়বে। ইউএনওর মাধ্যমে সরকারি লবণ পাওয়ার খবর পেয়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। এবার হয়তো ন্যায্য দামও পাওয়া যাবে।’
চামড়া পাচার রোধেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। শ্যামনগর ইউএনও রনী খাতুন বলেন, চামড়া যাতে বাইরে পাচার না হয়, সে বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারির প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্থানীয় ট্যানারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, এই উদ্যোগ নিয়মিত হলে একদিকে যেমন চামড়ার অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো পাবে অতিরিক্ত আয়। একইসঙ্গে স্থানীয় ট্যানারি শিল্প ও কাঁচামাল বাজারও সক্রিয় হবে।