খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপায় উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশাদুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ইমাম পরিষদের সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।
সভার শুরুতে উপস্থিত অতিথি ও প্রতিনিধিদের পরিচয়ের পর গলাচিপা উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন চিত্র নিয়ে একটি তথ্যবহুল ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এতে উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগব্যবস্থা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। ভিডিও শেষে উপজেলার সামগ্রিক চিত্র নিয়ে উপস্থিত সবাই প্রশংসা করেন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার আহ্বান জানান।
এরপর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একে একে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, গলাচিপা একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা হলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চরবিশ্বাসের চর বাংলা এলাকায় কৃষিজমি নিয়ে জটিলতা, খেয়া ভাড়া অতিরিক্ত আদায়, ধান ক্রয়ে অনিয়ম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সংকট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব, গলাচিপা ডিগ্রি কলেজে মেয়েদের ওয়াশরুম ও বাউন্ডারি সমস্যাসহ নানা বিষয় তারা সভায় তুলে ধরেন।
এছাড়াও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। বক্তারা আরও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাতে সড়কে অবাধে গরু ও ছাগল চলাচল করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। গলাচিপা পৌরসভার বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে রাতে মাদকাসক্তদের আনাগোনা বেড়ে গেছে, যা তরুণ সমাজকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী আদালতের পেশকার আবু জাফরের বদলীর আদেশ ১৮ দিন আগে হলেও তিনি এখনও দায়িত্ব না ছাড়ায় আইনজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “আবু জাফর ফাইলপত্র ও নথিপত্র নতুন পেশকারকে বুঝিয়ে দিলেই তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। প্রশাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে আমরা নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
এ সময় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী সকল বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন, “গলাচিপা একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও যোগাযোগসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। আমি গলাচিপাকে আরও সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও উন্নত উপজেলায় পরিণত করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের সমস্যা সমাধানে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব আরও বাড়াতে হবে। সেবা নিতে আসা মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
সভা শেষে জেলা প্রশাসক উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে সদর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
এ মতবিনিময় সভা গলাচিপার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও জনসেবার মানোন্নয়নে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে উপস্থিত সকলে মত দেন।
Leave a Reply