খন্দকার জলিল-স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ঘটেছে। অল্প বয়সের ভালোবাসার টানে প্রতারণার শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনের মায়া ছেড়ে বিদায় নিল গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমরান (১৬). গত ৩০ আগস্ট শনিবার বিকেলে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে মৃত্যু বরন করে সে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোদেলা নামের এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমরানের। প্রথমদিকে সম্পর্ক সুন্দরভাবে চললেও একসময় তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেয়। একপর্যায়ে রোদেলা আমরানকে সম্পর্ক থেকে দুরে ঠেলে দিলে তা সহ্য করতে পারেনি কিশোর আমরান। গভীর কষ্টে ভেঙে পড়ে সে। অসহায় মন আর ভাঙা স্বপ্নের বোঝা বয়ে বেড়াতে না পেরে শেষমেশ আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
আমরানের বাড়ি গলাচিপা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাস্তায়। রোদেলার বাড়িও একই এলাকায়। ঘটনার পরপরই এলাকায় শোকের আবহ নেমে আসে।
আমরানের মৃত্যুতে তার সহপাঠী ও বন্ধুরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। মৃত্যুর পরদিন তারা গলাচিপা শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় নিহত আমরানের মা শারমিন সুলতানা লিয়া এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এসময় তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ছেলের জন্য বিচার চান এবং রোদেলার টিসি প্রদানের দাবি তোলেন। তিনি বলেন— “আমার ছেলেকে প্রতারণা করে মেরে ফেলেছে। আমি চাই, রোদেলা আর গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তে না পারে। আমার ছেলের মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।”
সন্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরানের সহপাঠী এবং বন্ধুরা। তাদের হাতে ছিল আমরান ও রোদেলার ছবি সংবলিত ফেস্টুন। তাতে লেখা ছিল— “প্রেম নয়, প্রতারনার শিকার আমরান”, “রোদেলার ছলনায় আর যেন কোন ছেলের জীবন শেষ না হয়”, “একটি জীবনের বিনিময় হলেও রোদেলার অপকর্ম বন্ধ হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে আমরানের সহপাঠীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে মায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। অনেকে ফেস্টুন হাতে স্লোগান দিতে দিতে ভেঙে পড়ছিলেন। বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা সামলাতে না পেরে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সহপাঠীরা।
সংবাদ সন্মেলন শেষে একটি মিছিল পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল চলাকালীন তারা স্লোগান দেয়— “রোদেলার ঠাই নাই গলাচিপার মাটিতে”, “আমার ভাই মরলো কেন? বিচার চাই, বিচার চাই।”
এলাকার সাধারণ মানুষ মিছিল দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন। কেউ শোকাহত, কেউ আবার ক্ষুব্ধ। স্থানীয়রা বলেন— “অল্প বয়সে এভাবে একটি কিশোরের প্রান ঝরে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।”
এ যেন এক অকাল মৃত্যুর গল্প— যেখানে স্বপ্নের ডানা মেলবার আগেই ঝরে গেল এক তরতাজা প্রাণ। মায়ের বুক খালি করে, বন্ধুদের হৃদয়ে রেখে গেল এক অসহনীয় শূন্যতা আর ব্যথা।
Leave a Reply