খন্দকার জলিল-স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপায় ভয়াল রূপ নিয়েছে মাদক ব্যবসা ও সেবন। দিন দিন এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম-শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সন্ধ্যা নামলেই পরিত্যক্ত ভবনগুলো রূপ নেয় মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে নেশার গন্ধ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অভিভাবকরা এ নিয়ে রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক বেচাকেনা ও সেবন প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসতে চাইলেই হুমকি-ধামকির শিকার হতে হয়। ফলে নীরব আতঙ্কে বসবাস করছে সাধারন মানুষ। এ অবস্থায় এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে এবং তরুণ সমাজ ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে।
গলাচিপা পৌরসভা ও আশ পাশের ইউনিয়নের বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে গেলেই চোখে পড়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য। পরিত্যক্ত রুমের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিগারেটের খালি প্যাকেট, নেশাজাতীয় দ্রব্যের অংশ, খালি বোতল, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও সিগারেটের গোড়া। চারপাশে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ, যেখানে সাধারণ মানুষের দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্টকর, অথচ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করছে মাদকাসক্ত তরুণরা।
গলাচিপা থানা কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিয়মিত টহল ও অভিযান অব্যাহত আছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশলী হওয়ায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই গা ঢাকা দেয়। রাতের আঁধারে সক্রিয় থাকে চক্রটি। থানা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, কোনো মাদক ব্যবসায়ী বা সেবনকারীকে ধরতে গেলে তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যরা অপরাধীর পক্ষ নিয়ে কথা বলে। স্থানীয় কেউ সাক্ষী হতে চায় না। যারা রাতের বেলা মাদক সেবন বা বিক্রি করে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তৎপর থাকে। এতে পুলিশকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালাতে হয়। তারপরও পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও জোরদার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি চলছে।
মাদকের বিস্তারের কারণে গলাচিপার তরুণ প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। কর্মক্ষম বয়সী যুবকেরা আসক্ত হয়ে পড়ছে, যার ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সংকট বাড়ছে। শুধু ব্যক্তিই নয়, একে একে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো পরিবার। সমাজে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা ও অপরাধ প্রবণতা। অভিভাবকরা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন, যেকোনো সময় তাদের সন্তানও এই ভয়াল পথে পা বাড়াতে পারে।
এভাবে চলতে থাকলে গলাচিপা ও আশপাশের ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।