খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবু জাফরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও আইনজীবীদের প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে গলাচিপা উপজেলা আইনজীবীরা আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবু জাফর গত পাঁচ বছর ধরে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী আদালতে দায়িত্ব পালন করছেন। আরও জানা যায়, তিনি এমএলএসএস পদ থেকে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে পেশকার পদে উন্নীত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়মের মাধ্যমে আদালতকে ব্যক্তিগত আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন। এমনকি তিনি একজন সাধারন পরিবারের হয়েও এ চাকুরির পর পটুয়াখালী বাঁধ ঘাট এলাকায় পাঁচতলা একটি ভবন নির্মান করে বলে জানা যায়।
মামলার তারিখ পরিবর্তন, রায় প্রভাবিত করা, পক্ষভুক্তদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি, মামলার নকল কপি ও সই-মহর কপি দিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে। আইনজীবী ছাড়া নিজেই মামলা পরিচালনা এবং বিচারকের বরাত দিয়ে টাকা দাবি করাও তার নিয়মিত অনিয়মের অংশ বলে জানা যায়।
আইনজীবী প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মো. মোকলেছুর রহমান, এপিপি অ্যাডভোকেট গাজী আল-আমিন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেনসহ একাধিক আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীরা জানান, আবু জাফরের অফিস যেন একপ্রকার ঘুষের ব্যাংক শাখায় পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কাজে অতিরিক্ত টাকা না দিলে তিনি নথি আটকে রাখেন এবং ভুক্তভোগীদের হয়রানি করেন। এমনকি নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি তার বোনের ছেলেকে আদালতের কাজে তার সাথে বসিয়ে রেখেছেন।
৮ সেপ্টেম্বর সোমবার আদালত শুরুর আগে আইনজীবীরা তার কক্ষে গিয়ে নথি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে একজন আইনজীবীকে বলেন, “টুপি নামিয়ে কথা বলুন।” এতে উপস্থিত আইনজীবীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
এ ঘটনায় আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান আইনজীবীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে অভিযোগ শোনার পর তিনি আবু জাফরের বোনের ছেলে রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং অনুমতি ছাড়া অফিসে কাজ করায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করেন। একই সঙ্গে পেশকার আবু জাফরের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, আবু জাফরকে শুধু বদলি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, তিনি যেখানেই যাবেন সেখানেই দুর্নীতি চালিয়ে যাবেন। তাই তারা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।