মোঃ সুজন আহাম্মেদ সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা জুড়ে হেনা মাস্টার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় জনগণ ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ হেনা মাস্টারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেনা মাস্টার নিজ কেন্দ্রে জাল ভোট ও সিল মেরে ভোট নিশ্চিত করেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, নির্বাচনী গণতন্ত্রকে পদদলিত করে এভাবে ক্ষমতায় আসার বিষয়টি তাদের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
হেনা মাস্টারকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রশিদ কালু এবং গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে দেখা গেছে। এমন কি তিনি এখনও আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং অনেক গোপন তথ্য দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি কেবল ফারুক চৌধুরীর নৌকার পক্ষেই শুধু ভোট করেননি, মজিবুর রহমানের নৌকা প্রতীকের জন্যও কাজ করেছেন।
ঐ নির্বাচনে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক হযরত আলী বিশাল ব্যবধানে জয়ী হলেও, ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে মজিবুর রহমান ও হেনা মাস্টারের মতো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার বিজয় ছিনিয়ে নেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
শুধু নির্বাচন নয়, হেনা মাস্টারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের সময়ও ভয়ঙ্কর অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রতিবাদী তরুণদের দমন করার জন্য তিনি প্রকাশ্যে মাঠে নামেন এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। অভিযোগ আছে, তিনি ছাত্রদের মাঠে নামতে বারণ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে দিনের পর দিন এসব কাজ চালিয়ে গেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, ২০১৮ সালের বিএনপির কর্মসূচিতে সহিংসতার সময়ও তিনি বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করেন।
বিএনপির ছত্রছায়ায় থাকার সাধারণ মানুষের বিস্ময় ও ক্ষোভ, এতসব বিস্ফোরক ও ভোট ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার পরও হেনা মাস্টার এখনও বিএনপির কাছ থেকে আশ্রয় পাচ্ছেন—এই বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগকারীরা দাবি করছেন, কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতার সহযোগিতায় তিনি এখনও গোটা গোদাগাড়ী উপজেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগটি আসে তার নিজ গ্রাম গোগ্রাম ইউনিয়ন থেকে, ফারুক চৌধুরীর নির্দেশেই হেনা মাস্টার ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে ভোট ডাকাতি করেছেন এবং দিনের ভোট রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন এখনও তাকে গ্রেপ্তার করছেন না কেন?
গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তীব্রভাবে দাবি জানাচ্ছেন যে, হেনা মাস্টারকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই ভোট ডাকাতি ও সহিংসতার নেপথ্যে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় জনগণের দাবি, এই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।