আ: মান্নান টিপু ঃ স্টাফ রির্পোটার
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার ৭ নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের উপাধিক গ্রামে বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে প্রবাসী হাফেজ আহাম্মদের স্ত্রী নাসিমা বেগমের ঘরে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা হতবাক হয়ে পড়েছেন।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর একই গ্রামে গৃহবধূ শাহনাজ বেগমকে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে নতুন করে অগ্নিকাণ্ডে পুরো গ্রামজুড়ে অস্বস্তি, ক্ষোভ এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগের তীর নাসিমার দিকে
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাসিমা বেগম দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং এ ব্যবসাকে ঘিরে নানা অনিয়ম, প্রতারণা ও বিরোধের জন্ম দিয়েছেন। শাহনাজ বেগম হত্যাকাণ্ডেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি—সুদের টাকা লেনদেনকেই কেন্দ্র করে শাহনাজ ও নাসিমার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, নাসিমা বেগমের সঙ্গে কারও অর্থনৈতিক লেনদেন শুরু হলে তা শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের বিরোধে রূপ নেয়। শাহনাজ বেগম সেই বিরোধের শিকার হয়েছেন। আর হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাসিমার ঘরে অগ্নিসংযোগ, ঘটনাকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় কেউ ছিলেন না ঘরে
ঘটনার দিন বিকেলে নাসিমা বেগম বা তার সন্তানদের কাউকে ঘরে দেখা যায়নি। হঠাৎ ধোঁয়া দেখে স্থানীয়রা ছুটে এসে বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে খবর দেওয়া হলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে ঘরের ভেতরে বিশেষ কোনো মালামাল পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা—আগুন লাগার আগে পরিকল্পিতভাবে ঘরের আসবাবপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
প্রশাসনের উপস্থিতি ও তদন্ত
ঘটনার খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং এলাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ বলেই মনে হচ্ছে। তবে কারা জড়িত এবং এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য কী—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূর্ববর্তী ঘটনা (ব্যাকগ্রাউন্ড)
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতের অগ্নিসংযোগে গৃহবধূ শাহনাজ বেগম ভয়াবহভাবে দগ্ধ হন। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা শাহনাজ হত্যার সঙ্গে নাসিমা বেগমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করে আসছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতিক্রিয়া
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রবাসী হাফেজ আহাম্মদের স্বজনরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়—
“পরপর দুটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের এলাকাকে অশান্ত করে তুলেছে। প্রথমে শাহনাজ বেগমের মর্মান্তিক মৃত্যু, এরপর আমাদের বাড়িতে আগুন। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই—দোষীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।”
এলাকাবাসীর দাবি
এলাকাবাসী বলছেন, সুদের টাকা লেনদেনকে ঘিরে গ্রামের পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত। এর ফলেই একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান—অবিলম্বে এসব অপরাধ চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
Leave a Reply