শিরোনাম :
রাজশাহী মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সঙ্গে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় গোমস্তাপুরে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস (২০২৫) পালিত কবি রিপন শানকে নিয়ে শব্দকুঠির ৭৭ তম জমজমাট আসর অনুষ্ঠিত নিয়াজ মুহাম্মদ খান সিএসপি যিনি ভালোবেসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বিজয়নগরে বিজিবির বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোরাচালান পণ্য আটক। আখাউড়ায় উপজেলা দুই অটো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে দম্পতি আহত তরজুমানুল কুরআন ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ‎অর্থসহ ৫০০ কপি কুরআন বিতরণ পঞ্চগড়-১ আসনে এলডিপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আনিস প্রধান বর্ণাঢ্য আয়োজনে ফরিদগঞ্জে উপজেলা ও পৌর যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানবসেবায় এগিয়ে চলছে টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাবের স্বেচ্ছায় রক্তদান

মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১
  • ৭১২ বার পঠিত

দেশের সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানবসেবায় এগিয়ে চলছে টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাবের স্বেচ্ছায় রক্তদান। দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মাঝেও থেমে নেই টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাবের স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম। কোথাও জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলেই রক্তদাতারা ছুটে যাচ্ছেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম ও মানবতার ফলে বেঁচে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। রক্ত দিন’ জীবন বাঁচান- এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এই সংগঠনের কর্মীরা।

মাদারীপুর জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাব।এটি ২০১৯ সালে প্রথমে টেকেরহাট বন্দরকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হয়েছে। প্রথমে মাত্র কয়েকজন সদস্য নিয়ে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা কয়েক শতাধিক। প্রতিদিনই নতুন নতুন রক্তদাতা এই সংগঠনে যুক্ত হচ্ছেন। যারা দিন-রাত যে কোনো সময় রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে এগিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে সংগঠনটির মাধ্যমে জন রোগীকে রক্তদান করা হয়েছে। এই সংগঠনটি ইতোমধ্যে মাদারীপুর জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এছাড়া সারাদেশে মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে আশপাশের জেলাগুলোতে কার্যক্রম শুরু করেছে। সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বিশেষ আলোচনা সভার মাধ্যমে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাবের আহ্ববায়ক বাহালুল আলম বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার রক্তই লাল। এর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মানুষের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে, রক্ত ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়।যেমন- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, দুর্ঘটনায় আহত রোগী, আস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসবকালে, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া বর্তমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে, যা সফল করতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। ১৮ থেকে ৬০ বছরের যে কোনো সুস্থ ব্যক্তি যাদের শরীরের ওজন ৪৫ কেজির উপরে, তারা প্রতি চার মাস পর পর নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের ১৫ ভাগের ১ ভাগ। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। তারা যেমন তাদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করছেন, ঠিক তেমনি আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরাও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই করোনার মাঝে এগিয়ে না এলে অনেক মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো না। তাই আমাদের প্রতি প্রশাসনের সুনজর আশা করি।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, যখন শুনি একজন মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন তখন আমি ঘরে শুয়ে থাকলে হয়তো মুমুর্ষু রোগী রক্তের অভাবে মারা যেত।আমরা যদি তার এ বিপদের সময়ে মানবতার জন্য রক্তদান করি তাহলে তার প্রাণ বেঁচে যাবে।দেশরে এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বা‍ইরে বের হচ্ছি না, বের হচ্ছি অন্যের জীবন বাঁচাতে। রক্তদানের মতো মহৎ ও উত্তম কাজ আর কি হতে পারে!

আরেক সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবী মো. আল-আমিন শেখ বলেন, রক্তদান একটি মহৎ কাজ। সকলের উচিত রক্তদাতাদের সহায়তা করা। অনেক সময় রক্ত পেয়ে রক্তদাতার কথা রোগীর লোকও ভুলে যান! সেখানে অন্যদের কথা আর কি বলব! আসলে যখন নিজেদের কারো রক্ত লাগে তখনই মানুষ রক্তের বা রক্তদাতার মূল্য বোঝে।
টেকেরহাট ব্লাড ডোনার ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবী ও সাংবাদিক মো. আমানুল্লাহ ফকির বলেন, রক্ত মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানব দেহ থাকে সজীব ও সক্রিয়। আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো ও দুর্বল হয়ে প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। আর এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কারখানায় তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে এমনটাও আশা করা যায় না। মানুয়ের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে শুধু একটি নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কেননা এক ব্যাগ রক্তকে এর উপাদান হিসেবে তিনভাগে ভাগ করে তিনজনের দেহে সঞ্চালন করা সম্ভব। উপাদানগুলো হল- লাল রক্ত কণিকা (Red Blood Cell), প্লেটলেট (Platelet) এবং রক্তরস (Plasma). এক একজনের জন্য এক একটি উপাদান প্রয়োজন হয়। তাই আপনার এক ব্যাগ রক্ত একসঙ্গে বাঁচাতে পারে তিনটি প্রাণ। সামান্য পরিমাণ রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ। রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয়ই না বরং নিয়মিত রক্তদান করলে বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায়।

সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী এবং রক্তদাতারা বলেন, মাঝে মাঝে আমরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে রক্ত দিতে এগিয়ে আসি শুধুমাত্র মানবতার তাগিদে। কখনো রোগীর লোকের কাছে টাকা দাবি করি না। রাত-দিন সব সময়ই আমরা মানবতার টানে এগিয়ে আসি। কখনো কোনো যানবাহন না পেলে কয়েক মাইল হেঁটেই চলে যাই হাসপাতালে। তারপরও আমরা অবহেলিত। রক্ত পাওয়ার পর রোগীর লোকের একটা স্বস্তির হাসি দেখলেই আমাদের কষ্ট স্বার্থক হয়। তাই সকলের উচিত রক্তদাতা সংগঠনগুলোর সদস্যদের প্রতি সহনশীল হওয়া। আমাদের এই সংগঠন সবসময় মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাবে, ইনশা আল্লাহ। তাই সকলের সহায়তা কামনা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com