সোহেল রানা স্টাফ রিপোর্টারঃ
নওগাঁর মান্দায় কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিনকে ম্যানেজ করে নানা অজুহাতে সার সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামের রাসায়নিক সার বিক্রয় ও ওজনে কম দেয়া সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ডিলারদের বিরুদ্ধে। প্রকারভেদে বস্তা প্রতি তিন থেকে চারশ টাকা অতিরিক্ত ধরে সার কিনতে হয় কৃষকদের। এতে অতিরিক্ত দামে সার কিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। সচেতন মহলের অভিযোগ কৃষি অফিস এবং ডিলারদের সিন্ডিকেটের ফাঁদে কৃষক কাঁদে। নানা অব্যবস্থাপনা আর কৃষি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এমন সিন্ডিকেটের খুঁটি গেড়েছে ডিলাররা। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল তাই দ্রুত কৃষকদের বাঁচাতে এ দুর্নীতিবাজ কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বটতলা এলাকার কৃষক শামসুল ইসলাম এবং শ্রী স্বপন কুমার অভিযোগ করে বলেন, ভাই ভাই ট্রেডার্স ডিলারের কাছে গিয়ে কখনোই সার পাওয়া যায়না, নানা অজুহাত এখন নয় তখন তখন নয় কাল আসেন কিন্তু ১৩৫০ টাকা বস্তা ইউরিয়া সার ১৪৫০ টাকা ১৫শ টাকা দিলে তারা সার দেয়। একই এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম ও আব্দুল মান্নান বলেন, ১০৫০ টাকার ডিএপি ১২৫০ টাকা না দিলে পাওয়া যায় না। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, এই ডিলারের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ সে কারো কোনো কথাই শোনে না সময়মতো সার দেয় না এবং অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে। অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয়ের বিষয়ে সরেজমিনে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন অনুসন্ধান গিয়ে ভাই ভাই ট্রেডার্স এর সত্তাধিকারী যুগল চন্দ্র মন্ডল বিসিআইসি ডিলার হলেও পরিচালনা করেন তার ভাই সুবল চন্দ্র মণ্ডল তিনি বলেন এগুলো গোপন কথা বলা হয় না আবার না বললেও চলে না, প্রতিমাসে কৃষি কর্মকর্তাকে দশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় এজন্য কিছু কিছু সময় অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো বলেন চার মাসের চল্লিশ হাজার টাকা মাসোহারা বাকি ছিল এজন্য কৃষি কর্মকর্তা আমাকে হুমকিও দিয়েছেন। বিসিআইসির ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জীবন কুমার কুন্ডু বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর ২৬ শে মার্চ ২১শে ফেব্রুয়ারি সহ নানা দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রত্যেকটি ডিলারের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে কৃষি অফিসে দিতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। পরানপুর ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, হুমায়ুন বলেন ইরি বোরো মৌসুমী ডিলারের কাছে গিয়ে সার পাওয়া যায় না তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হয়। চককানু গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, ডিলারের কাছে স্যার পাওয়া যায় না সময় মত। আর যা পাওয়া যায় এতেও পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের কম থাকে প্রতি বস্তায়। প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, ডিলার পয়েন্টে নাকি কৃষকরা সার পাইনা, পেলেও অতিরিক্ত দাম দিতে হয় এমন অভিযোগ প্রায়ই করে কৃষকরা। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান কামরুল বলেন, আমার ইউনিয়নের সাবাইহাট এলাকায় বেশ কয়েকটা ডিলার পয়েন্ট হয়েছে। কৃষকদের স্যার সময়মতো দেওয়া হয় না অথচ বাহিরে গাড়ি গাড়ি সার বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই কৃষকরা এসে করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই প্রত্যেকটা এলাকায় মনিটরিং এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটের মুখোশ উন্মোচন করে জনগণের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। অপরদিকে কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৫-২৬ অর্থবছরের চাহিদা রয়েছে, ইউরিয়া ১০২৭০ মেট্রিক টন, টিএসপি ২০০৪ মেট্রিক টন, ডিএপি ৫৫১২ মেট্রিক টন, এমওপি ৩৬৬০ মেট্রিক টন, জিপসাম, ১৯১০ মেট্রিক টন, জিংক সালফেট, ৬৪৩ মেট্রিক টন, ম্যাগনেসিয়াম, ৬১৯, মেট্রিক টন। মান্দায় ১৪ টি ইউনিয়নে ১৫ জন বিসিএইসি এবং ২০ জন বিএডিসি ডিলার রয়েছে। এসব ডিলারের মাধ্যমে উপজেলায় বিভিন্ন ফসলের জন্য সঠিক সময়ের কৃষকের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রয়ের কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে এমনটাই অভিযোগ কৃষকের। এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারের কোন সংকট নেই, তবে কিছু কিছু জায়গায় কৃত্রিম সংকটের দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির খবর পেয়েছি। অনুসন্ধান চলছে দ্রুত সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে প্রতিমাসে ডিলারদের কাছে ১০ হাজার করে টাকা মাসোহারা নেয়ার বিষয় তিনি মিথ্যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণীত বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন, সার সংকট কিংবা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ পেলে মোবাইলকোটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, জেলায় সারের যে চাহিদা এতে সংকটের কোন কারণ নেই। তবে কিছু কিছু জায়গায় ডিলার পয়েন্টে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত করে সেগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মান্দা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতি মাসে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ডিলার। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply