শিরোনাম :
মিরপুর থানা কৃষক দলের গণসংযোগ ও বিশাল মিছিল ঢাকা ১৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শন ঝিনাইদহের কোটচাঁপুরে সরকারি রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের দিনব্যাপী কর্মশালা ও চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২১ দফা দাবিতে নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালীতে পানিতে ডুবে জন্নাতুল নুর নামের দুই বছর বয়সী এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সঙ্গে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় গোমস্তাপুরে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস (২০২৫) পালিত কবি রিপন শানকে নিয়ে শব্দকুঠির ৭৭ তম জমজমাট আসর অনুষ্ঠিত নিয়াজ মুহাম্মদ খান সিএসপি যিনি ভালোবেসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে

নিয়াজ মুহাম্মদ খান সিএসপি যিনি ভালোবেসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৪০ বার পঠিত

জাহাঙ্গীর আলম
ক্রাইম রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া

“নিয়াজ মুহাম্মদ খান” ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর অতি পরিচিত এবং প্রিয় একটি নাম। এই নামটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এখনকার প্রজন্মের সহজ পরিচিত হলেও নিয়াজ মুহাম্মদ খানের প্রাচুর্যময় কর্মজীবন ততটুকু পরিচিত নয়। নিয়াজ মুহাম্মদ খান (NM Khan) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার জনবান্ধব এসডিও যাঁর প্রশংসা এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে”। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার “নিয়াজ মুহাম্মদ হাই স্কুল” “নিয়াজ স্টেডিয়াম” ইত্যাদি স্থাপনা নামকরণ করা আছে এখনো তাঁর নামেই। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কে নিজের বাড়ি বলে ও দাবি করতেন।

নিয়াজ মুহাম্মদ খান ৭ জুন ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ) পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার দলেলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক সহ আইন বিষয়ে শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৩০ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড গমন করেন।

১৯৩২ সালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি তাঁর ব্যাচের সকল প্রার্থীর মধ্যে তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। তিনি ছিলেন মূলত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ব্রিটিশ ভারতের উচ্চস্তরের একজন বেসামরিক কর্মকর্তা বা আইসিএস (Imperial civil service ) অফিসার ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানে যাঁদেরকে সিএসপি (Central Superior services) বা সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তান বোঝানো হয়। ডিসেম্বর ১৯৩৩ সালে তিনি মহকুমা প্রশাসক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়োগ প্রাপ্ত হন। মহকুমা প্রশাসক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদানের পরে তাঁর অন্যতম স্মরণীয় দুটি কাজ হল এন্ডারসন ক্যানাল বা কুরুলিয়া খাল খনন এবং নিয়াজ স্টেডিয়াম নির্মান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূর্বাঞ্চলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা এবং বন্যা প্রতিরোধের জন্য কাউতলী-ভাদুঘর সংলগ্ন তিতাস নদী থেকে গোকর্ণ তিতাস নদী পর্যন্ত তিন মাইল দীর্ঘ এই সংযোগ খালটি খনন করেন। এই খালটি খনন করার সময় খাল খননের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ ওই সময় ছিল না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিতৈষী নিয়াজ মুহাম্মদ খান নিজ উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্টজন এবং সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাস্রমের ভিত্তিতে এই খালটি খনন করেছিলেন। খাল খনন সম্পন্ন হওয়ার পরে তৎকালীন যুক্ত বাংলার গভর্নর জন এন্ডারসন (গভর্নরের মেয়াদ কাল ১৯৩২-১৯৩৪ সাল) ১৯৩৪ সালে জলধারা প্রবাহিত করার মাধ্যমে খালটি উদ্বোধন করেছিলেন। বর্তমানে কুরুলিয়া খাল নামে পরিচিত হলেও এই খালটির অফিসিয়াল নাম এন্ডারসন ক্যানাল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর আরেকটি ঐতিহাসিক কাজ হল স্টেডিয়াম নির্মাণ যা বর্তমানে নিয়াজ স্টেডিয়াম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্টেডিয়াম) নামে নামকরণ করা আছে। এর আওতায় ছিল স্টেডিয়াম নির্মাণ সহ স্টেডিয়ামের সম্মুখভাগে দীঘি খনন। দিঘির চারপাশ মনোরম বাগান এবং পত্রপল্লবে সুশোভিত করা হয়েছিল। দীঘি এবং বাগানের দৃষ্টিনন্দন ও মনমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য ওই এলাকাটি দীর্ঘকাল “নিয়াজ পার্ক” নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে দীঘি ভরাট করে স্টেডিয়াম বর্ধন ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে যা এখন স্টেডিয়াম মার্কেট নামে পরিচিত।

এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবছর যে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় তাঁরও পথিকৃত ছিলেন এসডিও নিয়াজ মুহাম্মদ খান। স্টেডিয়াম নির্মাণের পর তাঁর তত্ত্বাবধানে মেলার আয়োজন শুরু হয়, তৎকালীন সময়ে যার নাম ছিল এসডিও’র মেলা। জমজমাট ওই মেলায় কলকাতা সহ যুক্ত বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের পন্যের দোকান বসতো। নিয়াজ মুহাম্মদ খানের তত্ত্বাবধানেই ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম ফুটবল লিগ শুরু হয় যা এখনো জেলা ফুটবল লিগ নামে চলমান আছে।

বর্তমান নিয়াজ মুহাম্মদ হাই স্কুল যেটি ১৯১০ সালে জর্জ স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে যখন নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় করা হয় তখন নিয়াজ মুহাম্মদ খান সিএসপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া দায়িত্বরত ছিলেন না। তিনি তখন করাচির চিফ কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান এবং নিয়াজ মুহাম্মদ খানের বন্ধু সম্পর্কীয় আব্দুল কাদের মুন্সির অনুরোধে তিনি তৎকালীন পূর্ব বাংলার গভর্নর জাকির হোসেন কে বলে স্কুলের পাকা বিল্ডিং এর জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেন। পাকা বিল্ডিং স্থাপিত হওয়ার পরে জর্জ স্কুল নাম পরিবর্তন করে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ তাঁর নামে স্কুলের নামকরণ করা হয়। সেসময় তাঁর সুপারিশেই মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বর্তমানে যে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল আছে সেটি কাঁচা ঘরের পরিবর্তে বিল্ডিং এ রূপান্তরিত হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরো অসংখ্য জনহিতকর কাজের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বান্ধব সিএসপি নিয়াজ মুহাম্মদ খানের নাম জড়িয়ে আছে।

নিয়াজ মুহাম্মদ খান ১৯৩৮ সালে দুই অধিবেশনের জন্য ভারতীয় কেন্দ্রীয় পরিষদের একজন আনুষ্ঠানিক সদস্য নির্বাচিত হন। দেশভাগের সময় তিনি বঙ্গভঙ্গ পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে একমাত্র সদস্য হিসেবে স্টিয়ারিং কমিটিতে ছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ সালে কৃষি পরিচালক থাকা অবস্থায় ঢাকায় একটি কৃষি কলেজ ও খামার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে,১৯৫৪ সালে করাচির চিফ কমিশনার থাকাকালীন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) নির্মাণে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

১৯৫০ সালে তিনি চট্টগ্রামের কমিশনার হিসাবে একটি স্টেডিয়াম (চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম যা ইতিপূর্বে নিয়াজ স্টেডিয়াম নামে নামকরণ করা ছিল) ও একটি পার্ক নির্মাণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৪ সালে শিল্প সচিব হিসেবে করাচিতে যোগদান করেন ওই সময় তিনি করাচির চিফ কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি নিযুক্ত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com