আওরঙ্গজেব কামাল : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে জামাত ইসলামী বাংলাদেশের ব্যাপক হারে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। এদিকে হেফাজাত ইসলাম বলেছেন, জামাতবাদের সকল ইসলামী দলকে কক্ষপথ্য হতে হবে। বর্তমানে এমসিপি নির্বাচন কমিশনের কোপা রাস্তা রাখতে পারছে না বলে বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন গণতন্ত্র আজ টালমাটাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দিন দিন গভীর হচ্ছে। এক পক্ষ বলছে— সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, অন্যদিকে আরেক পক্ষের দাবি— গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। এদিকে তৃতীয় একটি পক্ষের দাবি, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিতে হবে। অপরদিকে, আরেক রাজনৈতিক দল বলছে— জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নই আসে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেমন হবে— তা নিয়ে দেশি-বিদেশি মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রধান দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা ও সংলাপ ছাড়া একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসী অপেক্ষা করছে— ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয়, এবং তা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে কোন পথে নিয়ে যায়, সেই ফলাফলের জন্য। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলছে ,আমরা বার বার বলে আসছি যে স্পষ্ট রোডম্যাপ এবং দ্রুত নির্বাচন। তা না হলে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, এই সংকটগুলো কাটবে না। অপরদিকে জামাত নেতৃবৃন্দরা বলছেন,আপনার দেরি না করে অতি জরুরি সংস্কার কাজ শেষ করে একটা নির্বাচন দিয়ে আপনাদের যার যার জায়গায় ফিরে যান। এই নির্বাচনে জনগণ যাকে ভালোবাসবে, যার উপরে আস্থা রাখতে পারবে- তাদেরকে দেশের দায়িত্ব দিলে তারা দেশের মানুষকে সম্মান করবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দ্রুত গণভোট দিতে হবে।জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন,“বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবিশ্বাসযোগ্য হয়ে পড়েছে। কমিশন পুনর্গঠন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না।এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় আরও বলেন,“গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একইসঙ্গে করা যেতে পারে, এতে সময় ও সম্পদের অপচয় রোধ হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই যদি দলগুলো আস্থা পুনর্গঠন ও সংলাপে না বসে, তবে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন“যে নির্বাচনের আগে এই মাত্রার অস্থিরতা, সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রথম প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া পতিত অসুভ শক্তি ভর করতে পারে।সবমিলিয়ে ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পরিণত হতে যাচ্ছে।নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হয়, এবং আন্তর্জাতিক মহলে কতটা স্বীকৃতি পায়— তা এখন পুরো জাতির অপেক্ষার বিষয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করছেন, পারস্পরিক আস্থা ও সংলাপ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। তারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে যদি রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় না বসে, তবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক ইভেন্ট নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এখন পুরো জাতি তাকিয়ে আছে— এই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে কতটা স্বীকৃতি পায়, সেই ফলাফলের দিকে।
লেখক ও গবেষক: আওরঙ্গজেব কামাল সভাপতি ঢাকা প্রেস ক্লাব