ময়মনসিংহের নান্দাইলে আবাদি জমিতে সরকারি নিয়মনীতি ব্যাতিরেখে অবৈধভাবে ইটখলা স্থাপন করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদেরকে মোটা অংকের লোভ দেখিয়ে আবাদি জমি লীজে নিয়ে সেখানে ইটখলার জন্য মাটির স্তুপ দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই গ্রামীণ রাস্তার পাশে আবাদি জমিতে অবৈধভাবে ইটখলা স্থাপন করায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উক্ত গ্রামীণ রাস্তাটিতে পাকাকরণের কাজ চলমান থাকায় ইটখলায় মাটি নেওয়ায় রাস্তার ম্যাগাডনের উপর মাটির বিস্তর প্রলেপ পড়েছে। যা রাস্তার কাপের্টিং কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। সরজমিন পরিদর্শনে জানাগেছে, উপজেলার ৫নং গাংগাইল ইউনিয়নের সুরাশ্রম-সুন্দাইল গ্রামে ৮ একর ৫০ শতাংশ আবাদি জমিতে অবৈধভাবে ইটখলা স্থাপনের কাজ চলমান। কাঠা প্রতি (১০ শতাংশ জমি) ৭ হাজার টাকায় এলাকার আলতু মেম্বার নামে এক কৃষক ৩০ কাঠা জমি, মোতালিব সাড়ে ৬ কাঠা, কাসেম ৩ কাঠা, এলাকার আরেক যুবক ১৬ কাঠা ও সুন্দাইল গ্রামের এক কৃষক দিয়েছে ৭ কাঠা। এভাবে আবাদি জমি দখলে নেয় সারোয়ার আলম নামে এক ব্যক্তি। যিনি নান্দাইল উপজেলা ইটখলা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে উক্ত ইটখলায় মাটি আনতে গিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ গাংগাইল বাজার টু পাইকুড়া গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। রাস্তায় মাটি পড়ে রাস্তার ম্যাগাডনের উপর মাটির বিস্তর প্রলেপ পড়ায় রাস্তাটির কার্পেটিং কাজে স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে নান্দাইল আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন গত শনিবার সরজমিন পরির্দশনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষনিক বিষয়টি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সেলফোনে অবহিত করেন। পাশাপাশি অবৈধ ইটখলাটি জরুরীভাবে বন্ধ করা সহ আবাদি জমি ও রাস্তাটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে সংসদ সদস্য তাঁর নিজ নামীয় ফেসবুক আইডিতে অবৈধ ইটখলার ছবি সহ একটি পোষ্ট প্রদান করেন। পরে নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটি আরিফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উক্ত ইটখলা স্থাপনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এ বিষয়ে ইটখলার জন্য ৩০ কাঠা জমি লীজে দেওয়া কৃষক আলতু মেম্বার বলেন, “কাঠা প্রতি ৭ হাজার টাকায় ৩০ কাঠা জমি দিয়েছি। তাতে অগ্রীম ১ লাখ টাকা আমাদেরকে দিয়েছে। এখানে ফসল ভালো হয় না, আর তারা আমাকে ধরছে, তাই দিয়ে দিছি। আমি তো এত কিছু জানি না।” এ বিষয়ে ইটখলা স্থাপনাকারী মো. সারোয়ার আলম বলেন, আমি ইটখলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন দিলে কাজ শুরু করবো। তা না হলে করবো না। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না ? তা তিনি এখনও জানেন না।’ এ বিষয়ে গাংগাইল ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার জানান, অবৈধ ইটখলা স্থাপনকারী সারোয়ার আলমের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’ নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটিএম আরিফ বলেন, আমরা সরজমিন পরিদর্শন করে সত্যতা পেয়েছি এবং ফসলি জমি থেকে ইটখলার মাটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সহ ইটখলাটি বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
ছবি-সংযুক্ত-৩