উত্তরা প্রতিনিধি
রাজধানীর উত্তরার পলওয়েল কারনেশন মার্কেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কবির হোসেন খান–এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মার্কেট পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের দাবি—তার দাপট ও প্রভাব মার্কেটে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দুর্নীতি ও অনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের জন্য লাভজনক হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। দোকান ভাড়া, ব্যবসা পরিচালনা, এবং মার্কেটে নতুন দোকান নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়া-নেওয়া একটি অস্বাভাবিক চর্চায় পরিণত হয়েছে বলে দাবি তাদের।
দোকান ভাড়া, ঘুষ ও অনৈতিক সুবিধার অভিযোগ: দোকান ও অফিস স্পেস ভাড়ার সময় ‘মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে’ বাড়তি আর্থিক সুবিধা নেওয়া, নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া কারও দোকান ভাড়া না দেওয়া, কিছু গোল্ড ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বর্ণ বাকিতে নিয়ে বিশেষ সুবিধা তৈরি করা, এসব অভিযোগ ব্যবসায়ীরা তুলে ধরেছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি—কবির হোসেনের অধীনে দুইজন কনস্টেবল ও স্থানীয় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সাকিবকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দোকান মালিকদের হুমকি, ভয়ভীতি ও হয়রানিও করা হয়।
সিন্ডিকেট ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন: কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, সাকিবের সঙ্গে কবির হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে মার্কেটের চতুর্থ তলায় চারটি দোকান নেওয়ার বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব দোকানের সার্ভিস চার্জ বা জমিদারি বিল দীর্ঘদিন বকেয়া থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চতুর্থ তলার কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, সাকিব মাঝে মাঝে স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় এবং দোকান ভাড়া নিতে এলে নতুন ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিলবোর্ড ভাড়া নিয়েও অভিযোগ: মার্কেটের বাহিরের দুটি বড় বিলবোর্ড ভাড়ার ক্ষেত্রেও আর্থিক দাবি করা হয়েছে বলে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন। তার দাবি—মার্কেটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিলবোর্ড নিতে গেলেও সিন্ডিকেট বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করে।
ভয়ভীতি, সুদের ব্যবসা ও দোকান বিক্রি করানোর অভিযোগ:ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তরুণ উদ্যোক্তাদের ভয় দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়া,দোকান ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা, দোকান মালিকদের নিরুৎসাহী করে দোকান কম দামে কিনে পরে মোটা দামে বিক্রি করা, এসব কর্মকাণ্ডে সিন্ডিকেট সক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে—জমিদারি বিল বা সার্ভিস চার্জ বকেয়া থাকা দোকান মালিকদের ভয় দেখিয়ে দোকান ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টাও করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগপত্র ও আতঙ্ক: কয়েকজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাদের দাবি—অভিযোগ দেওয়ার পরে কবির হোসেন ব্যক্তিগতভাবে মার্কেটে এসে কয়েকজনকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান। এতে অভিযোগকারীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
মার্কেট পরিদর্শনে যা দেখা যায়: সরজমিনে মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম বড় মার্কেট হওয়া সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের অসন্তোষ প্রকাশ পায়।
ব্যবসায়ীদের উত্থাপিত এসব অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন বলে অনেকেই মত দিয়েছেন। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।