| প্রকাশিত: পিএম, ১২ আগস্ট ২০২১/
পাসপোর্ট নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের
পাসপোর্ট নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মাঝে। পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মালয়েশিয়া থেকে আবেদনকারীদের। একদিকে গ্রেফতার হওয়া, সময় মতো ভিসা নবায়ন করতে না পারা অন্যদিকে জরিমানা দেয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধারা।
মালয়েশিয়ায় থাকা অনেক প্রবাসী অভিযোগ করে বলেন, সময়মতো পাসপোর্টের আবেদন করেও পাচ্ছেন না। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ পাসপোর্টের কারণে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছেন না। পাসপোর্টের আবেদন করে বসে আছেন। অথচ পাসপোর্ট না পেলে তাদের সবকিছু গুটিয়ে দেশে চলে আসতে হবে।এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফা ফিরোজ বলেন, সময়মতো পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সব পদ্ধতি সহজ করা গেলে ভালো সেবা দিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব। পাসপোর্টকেন্দ্রিক সমস্যার কথা প্রবাসীর পরিবারও বলে থাকে। তাই এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
হাইকমিশন বলছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩২টি পাসপোর্ট বিতরণ করেছে হাইকমিশন।গত ৭ আগস্ট মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের দূতালয় প্রধান রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।হাইকমিশন জানায়, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীদের জানানো যাচ্ছে, দ্রুততম পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাইকমিশন মহামারির মধ্যেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই মহামারির সময়ে হাইকমিশন প্রবাসীদের সুবিধার্থে ৩৬টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে পাসপোর্ট বিতরণ করে যাচ্ছে।
গত নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে হাইকমিশন সর্বমোট ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩২টি পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। এছাড়া সম্প্রতি পোস লাজুর মাধ্যমে পাসপোর্ট ডেলিভারি সংক্রান্ত কার্যক্রম আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে দৈনিক অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাড়ানো হয়েছে।
গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত অ্যাপয়েন্টমেন্টের বিপরীতে সব পাসপোর্ট নির্ধারিত পোস্ট অফিসে পাঠানো হয়েছে। আবেদনকারীদের স্ব স্ব পোস্ট অফিস থেকে দ্রুত পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেছে হাইকমিশন।
তবে এ পর্যন্ত কতটি পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে দূতাবাসের নোটিশে উল্লেখ করা না হলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারের ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে প্রচুর সংখ্যক পাসপোর্ট পাইপলাইনে জমা আছে। হাইকমিশনের আওতা বহির্ভূত এই সাময়িক জটিলতার জন্য হাইকমিশন আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
এই কারিগরি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা শিগগিরই সমাধান হবে বলে আশা করছে হাইকমিশন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট দিতে প্রয়োজনীয় সব পদ্ধতি অনুসরণ ও অবলম্বন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হাইকমিশনে অনুরোধ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালয়েশিয়া প্রবাসী বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে কেন এত সংকট? দেশ যখন ডিজিটাল হচ্ছে তখন পাসপোর্ট অধিদফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্ভারের ধারণ ক্ষমতা কী করে শেষ হয়ে যায়? আর এই কারণে প্রবাসীদের কেন সমস্যায় পড়তে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা জানা গেল, তা মোটামুটি পুরনো দুর্নীতি আর ব্যর্থতারই আরেক চিত্র! ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে এমআরপি দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত জানলেও সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসা প্রকল্প শুরু হয়।
বাংলাদেশে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) কাজটি পেয়েছিল মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন। সম্প্রতি সংকটের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেছে, আইরিস করপোরেশনে সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি ছিল তাতে তাদের তিন কোটি পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ নেয়া ও পাসপোর্ট তৈরির কথা ছিল।
জুন মাসে সেই তিন কোটি আঙুলের ছাপ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর নতুন করে আর পাসপোর্ট ছাপা যাচ্ছিল না। কারণ কারো নতুন এমআরপি করতে হলে সার্ভার থেকে আগের পাসপোর্টের সঙ্গে তথ্য যাচাই হওয়ার কথা। কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবার সেটি হচ্ছিল না। ফলে পাসপোর্টও প্রিন্ট দেয়া যাচ্ছিল না। আবার দেশে ই-পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ থাকলেও বিদেশের কোনো দূতাবাসে এখনো ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হয়নি। ফলে কোনো বিকল্পও করা যাচ্ছিল না।
পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট সমাধানে ফের আইরিসের সঙ্গে আরও ৬০ লাখ এমআরপির বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতবড় একটা সংকট আগে থেকে কেন বুঝতে পারলেন না নীতি নির্ধারকরা।
গত জুন মাসেই বিভিন্ন দূতাবাসে সংকটের তীব্রতা বাড়ে। তখন থেকে আর পাসপোর্টই ছাপানো যাচ্ছিল না। এত কিছু জানার পরেও কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া গেল না? সরকারি এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রবাসীদের কেন ভুগতে হচ্ছে?
অভিযোগ উঠেছে, জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজ এবার ই-পাসপোর্ট তৈরির কাজটি পায়। মূলত এরপর থেকেই আইরিস নানাভাবে অসহযোগিতা করছে। এমনকি এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্টের তথ্য ইন্টিগ্রেশনের সময়ও তাদের সহযোগিতা পেতে কষ্ট হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে অসহযোগিতা এবারই প্রথম নয়। বিভিন্ন সরকারি নথি ও দূতাবাস থেকে পাঠানো কাগজপত্র বলছে, অতীতেও আইরিশের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠানের কাজের ব্যাপারে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply