ভালুকা (ময়মনসিংহ)নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) এর মা ও শিশুদের কল্যাণে যত্ন প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদেরকে ১৬ শত থেকে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ইউপির মেম্বাররা প্রকল্পের কোনও নিয়মনীতি অনুসরন না করে অর্থের বিনিময়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। ফলে ফরম তুলেও বাদ পড়েছেন প্রকৃত দরিদ্র সুবিধাভোগীরা আর বঞ্চিতদের বদলে সচ্ছল, বিত্তবান এমনকি চাকরিজীবী পরিবারের মা ও শিশুরা তালিকাভুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এসব কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বরত কর্মীদের রয়েছে গাফিলতি। ১৫ মার্চ রোববার সকাল থেকে মেদুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদে কার্ড ভিতর কালে ভুক্তভোগীরা তাদের খুব প্রকাশ করলে এলাকায় জানাজানি হয়। এছাড়াও ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনিয়মের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তাছাড়া ৭ নং ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের ভুক্তভোগীদের কাজ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়।
এদিকে কতজন চুড়ান্ত তালিকভুক্ত হয়েছে তা জানতে চাইলে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বরত কর্মকতা সেতু রানী জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৫ মার্চ ২০২১ রোববার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশই স্বচ্ছল পরিবারের নারী ও শিশু। অধিকাংশই প্রভাবশালী ও সম্পদশালী পরিবারের। তাদের অনেকের পাকা বাড়ি, ১০-১৫ বিঘা আবাদি জমি, ব্যবসা এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবিও রয়েছেন।
৭ নং ওয়ার্ড বান্দিয়া গ্রামের মকবুল রীরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, নূর অালমের স্ত্রী শাপলা, ও ইব্রাহিমের স্ত্রী রোকসানা বেগম, মিয়াচান খানের জামাতা রাইহান মেস্তরীসহ অারো অনেকেই জানান, অভাব-অনাটনে সংসার চলে। সংসারে শিশু রয়েছে। পুষ্টি ভাতার কার্ডের জন্য ফরম তুলে পূরণ করে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু মেম্বারের দাবি করা টাকা দিতে পারি নাই। এ কারণে পুষ্টি ভাতার কার্ড জোটেনি। অথচ বাড়ি পাশের সচ্ছল অনেক পরিবার অর্থের বিনিময়ে পুষ্টি ভাতার কার্ডে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং গ্রামের আরো অনেকেই নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অাবুল কালাম আজাদ বলেন,শিশু যন্ত্র ‘প্রকল্পের তালিকা তৈরিতে কোনও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এখনো অাসে নাই তবে অভিযোগ অাসলে বা পাওয়া গেলে তা সহ্য করা হবে না।
এ বিষয়ে মেদুয়ারী ইউনিয়ন অাওয়ামীগের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক অাতিকুর রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া দরিদ্র পরিবারের শিশু যন্ত্র ভাতায় যাঁরা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পর্বক আইনুগ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে মেদুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেসমিন নাহার রানি জানান, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মাইকিংসহ প্রচারণা চালিয়ে সুবিধাভোগীদের যাচাই-বাছাই করা হয়। প্রকল্পের নিয়ম অনুসরণ ও সরেজমিনে পরির্দশন করেই প্রকৃত সুবিধাভোগী বাছাই করা হয়। কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বা-টাকা আদায়ের বিষয়টি অামার জানা নাই।
৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মজিবর রহমান শাকিল স্বীকার করে বলেন, সামান্য কিছু টাকা অনলাইন খরচ নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অাবুল কালাম আজাদ বলেন,শিশু যন্ত্র ‘প্রকল্পের তালিকা তৈরিতে কোনও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এখনো অাসে নাই তবে অভিযোগ অাসলে বা পাওয়া গেলে তা সহ্য করা হবে না।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুন জানান, প্রকল্পের আওতায় ফরম উত্তোলনের সময়েই নোটিশ এবং মাইকিং করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও প্রকল্পে নাম তালিকাভুক্ত করতে যদি কেউ টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিললে সেই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে আইএসপিপি ইউনিয়ন অ্যাসিস্ট্যান্টসহ দায়িত্বরত মাঠকর্মীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে সেতু রানির দাবি, প্রকল্পের আওতায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেম্বারাই করেছেন।