রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের বার্তা নিয়ে এলো মাহে রমজান। রমজান মাস আরবী মাসের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম, অন্য কোন মাসের সাথে আল্লাহ তায়ালার এ মাসের কোন তুলনা চলে না । এ মাসে আল্লাহ তার রহমতের সমস্ত দরজা খুলে দেন এবং রোজাদারদেরকে নিজ কুদরতি হাতে পুরষ্কৃত করবেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয় তম। রমজানের রোজার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেছেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ হে ঈমানদারগন তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরুপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ব বর্তীদের উপর, যেন তোমরা ফরহেজগারী অর্জন করতে পার। (আল বাকারা ১৮৩) شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ [٢:١٨٥] রমজান মাস হল সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন মাজিদ। মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশনা এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।(আল বাকারা ১৮৫) উক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজার সম্পুর্ন গুরুত্ব আলোকপাত করেছেন। তাই প্রাপ্তবয়ষ্ক সকল নর-নারী সকলের উপর রোজা রাখা ফরজ। রোজার কাকে বলেঃ রোজা শব্দটি ফারসী, আরবী পরিভাষায় সওম যার বহুবচন সিয়াম এবং রমাদ্বান অর্থ জালিয়ে দেয়া এবং সিয়াম অর্থ উপবাস করা, বিরত থাকা। পারিভাষিক অর্থে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকারের পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। রোজার ফজিলতঃ ১/ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখবে তার পুর্ববর্তী সকল পাপ ক্ষমা করা হবে।(বুখারি ও মুসলিম) ২/ হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন রোজা আমার জন্য আমিই তার (অফুরন্ত,অগনিত) প্রতিদান প্রদান করব। (বুখারি ও মুসলিম) ৩/ রোজাদারদের জন্য দুটি পুরষ্কার রয়েছে, এক যখন সে ইফতার কয়রে তখন সে খুশি হয়, দুই এবং যখন তার আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাত হবে তখন সে রোজার কারনে খুশি হবে। ৪/ রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে কস্তুরির সুগন্ধির চেয়েও অধিক প্রিয়। ৫/ যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা সেই এক দিনের কারনে তার চেহারাকে সত্তর বছরের দুরত্বের ন্যায় দোযখ থেকে দূর করে দিবেন। (বুখারি ও মুসলিম) ৬/ রমজান মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমান এবং একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান।(ইবনে খুজায়মা) ৭/ জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস রমজান, রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।(মুসনাদে আহমাদ) রমজানের বিশেষ বৈশিষ্টঃ ১/ কুরআন নাজিলের মাস। ২/ জীবনের গুনাহসমুহ থেকে ক্ষমা পাওয়া। ৩/ ভাল কাজের প্রতিদান অধিক পরিমাণে দেওয়া হয়। ৪/ দুআ কবুল হয়। ৫/ রমজান মাসে জান্নাতের দরজাসমুহ খুলে দেওয়া হয়। ৬/ জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭/ শয়তানদের শিকল দ্বারা আবদ্ব করা হয়। জান্নাতের দরজাঃ রাসুলুল্লল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে, তাকে বলা হয় রাইয়্যান। কেয়ামতের দিন এই দরজা দিয়ে কেবলমাত্র রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, বলা হবে রোজাদাররা কোথায়? রোজাদাররা দারিয়ে যাবে। সেই দরজা দিয়া তারা ছাড়া আর কেঊ প্রবেশ করতে পারবে না যখন তারা ভেতরে প্রবেশ করবে তখন দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। (বুখারি ও মুসলিম) সাহরির ফযিলতঃ রাসুলুল্লল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাহরি বা শেষ রাতে খাদ্য গ্রহন করবে, কারন সাহরির মধ্যে বরকত রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম) ইফতারের ফযিলতঃ ১/ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে তার জন্য সিয়াম পালনকারীর সমপরিমান পুরষ্কার বা সওয়াব লিখা হবে তবে সিয়াম পালনকারীর সওয়াব বা পুরষ্কার একটুও কমানো হবে না।(আহমাদ ও দারিমি) ২/ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যতদিন পর্যন্ত মানুষ (সূর্যাস্তের সাথে সাথে) অবিলম্বে ইফতার করবে ততদি তারা কল্যানের মধ্যে থাকবে। (বুখারি ও মুসলিম) তারাবীহ নামাজঃ ১/ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি ইমানদারি ও সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে রমজানের রাতে দন্ডায়মান হয় তার পুর্বেকার গুনাহসমুহ মাফ হয়ে যায়। লাইলাতুল ক্বদরঃ রমাদ্বানের শেষ দশ দিনের বেজোর রাতের মধ্যে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, যাকে কুরআন এবং হাদীসের ভাষায় লাইলাতুল ক্বদর বলা হয়। (সূরা ক্বদর, আল- কুরআন) লাইলাতুল ক্বদরের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বদরের রাতে নামাজ আদায় করবে তার পুর্বেকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(বুখারি ও মুসলিম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়ছে যা হাজার মাসের চায়ে উত্তম। যে ব্যাক্তি এ কলযান থেকে বঞ্চিত হলো সে মুলত সব কল্যান থেকেই বঞ্চিত হলো। রমজান মাসে করনীয়ঃ ১/ রোজা রাখতে হবে। ২/ কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। ৩/ বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করতে হবে। ৪/ বেশি বেশি দান সদকা করা উত্তম। রমজান মাসে বর্জনীয়ঃ ১/ অনর্থক কথা-বার্তা না বলা । ২/ হৈ- হুল্লা না করা। ৩/ গল্প-গুজবে মেতে না থাকা।
Leave a Reply