স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়োগবিধিতে বলা আছে যে উপসহকারী প্রকৌশলী/নক্সাকার পদের জন্য আবেদনের যোগ্যতা পুরকৌশলে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির ডিপ্লোমা। একই যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একই পদে লোকবল নিয়োগের জন্য। সব মিলিয়ে ৬২৭টি পদের জন্য দুই বছরের বেশি আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়া চলাকালে এলজিইডি নিয়োগের যোগ্য/অযোগ্য প্রার্থীদের বিজ্ঞপ্তির উপর পিএসসি কর্তৃক মৌখিক পরীক্ষার জন্য অযোগ্য কয়েকজন প্রার্থীর হাইকোর্টে রিট আবেদনের কারণে পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াই আটকে আছে। যদিও আদালত স্থগিতাদেশ দেননি। এরই মধ্যে সবগুলো পদের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এলজিইডির ২৬৩ পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ না পাওয়ায় ৪ঠা জানুয়ারি ভাইভা সম্পন্ন ২২০৯ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করছেনা পিএসসি। এতে ছয় হাজার ৬১৩ জন চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এলজিইডি বলছে, মাঠ পর্যায়ে তাদের উপসহকারী প্রকৌশলীর তীব্র সংকট চলছে। এ অবস্থায় নিয়োগ আটকে থাকায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে পিএসসি বলছে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় তাদের কিছু করার নেই। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় (নন-ক্যাডার) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি (নম্বর-১১-৫৬) দেয়। এরই মধ্যে অন্য সব পদের বেশির ভাগেই লোক নিয়োগ হয়ে গেছে। কিন্তু এলজিইডির ২৬৩, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৭২ এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৭২টি উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ ও একই অধিদপ্তরের ২০ এস্টিমেটর পদে নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। জানা গেছে, এলজিইডি লিখিত পরীক্ষার পর পিএসসি প্রার্থীদের সব কাগজপত্র দেখে বিভিন্ন কারণে ১৬১ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১১০ জনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় পুরকৌশলে ডিপ্লোমা না থাকায়। এই প্রার্থীরা কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি ও অন্যান্য বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী। তাঁদের মধ্যে ৮৬ জন গত বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তাঁরা দাবি করেন যে তাঁদের ডিপ্লোমা পুরকৌশলের সমমানের। উচ্চ আদালত গত ২৮ ডিসেম্বর আবেদনকারীদের কেন মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুলে সাত বিবাদীকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একই পদে চাকরিপ্রার্থী তিন হাজার ৪২ জনের মৌখিক পরীক্ষা আটকে গেছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেও একই পদের জন্য এক হাজার ১২৫ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। একই অধিদপ্তরের এস্টিমেটর পদে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ২৩৭ জন অপেক্ষায় আছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিএসসি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এ বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একটি রিট পিটিশনের কারণে নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে। আদালত তো নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলেননি, তাহলে কেন বন্ধ রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,আমাদের আইন উপদেষ্টার মতামত নিয়ে সম্ভবত এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি বিষয় যদি বিচারাধীন থাকে, সেটি আগানো যায় না। বন্ধ রাখব কেন? আমাদের কাজই তো এটা। এলজিইডি সূত্র জানায়, মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার আগে পিএসসি যোগ্যতার বিধি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানায়। সেখান থেকে এলজিইডিকে জানিয়ে মতামত চাওয়া হয়। তখন এলজিইডি নিয়োগবিধিতে যা দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী নেওয়ার জন্য মত দেয়। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, যেখানে একটি উপজেলায় চারজন করে উপসহকারী প্রকৌশলী থাকার কথা, সেখানে বেশির ভাগ জায়গায় আছে দুজন। কোথাও কোথাও একজনও রয়েছে। জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পিএসসি আমাদের চিঠি দিয়ে জানায়, মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই যেন আইনি পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। পরবর্তীতে আমরা একটা পক্ষ হয়ে উকিল নিয়োগ করেছি। একটি শুনানিও হয়েছে।’ এলজিইডির আইনজীবী মিন্টু কুমার মণ্ডল বলেন, ‘হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হলেও কোনো স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। এর পরও পিএসসি নিয়োগ আটকে রেখেছে।পিএসসি চাইলে মৌখিক পরীক্ষার ফল দিতে পারত, পরে বাদীর পক্ষে রায় গেলে সেই ব্যবস্থা নিতে পারত। মোঃ সামসুজ্জোহা নামের এক পার্থী বলেন, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের চারটি নিয়োগের একটিও সম্পন্ন করতে পারেনি পিএসসি, তাই আমরা হতাশায় নিমজ্জিত। কারিগরি বোর্ড থেকে জানা যায়, পুরকৌশলের(সিভিলের) সাথে রিটকারী ডিপার্টমেন্ট কন্সট্রাকশন এর কিছুটা মিল থাকলেও কিন্তু সিভিলের সমমান না।
Leave a Reply