খন্দকার জলিল, স্টাফ রিপোর্টার
পটুয়াখালী জেলার রাংগাবালী উপজেলায় নবগঠিত দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত পরিদর্শন করেছেন জেলা ও দায়রাজজ মো. শহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ২টায় তিনি পটুয়াখালী থেকে রাংগাবালী পৌঁছান। আদালত পরিদর্শন শেষে আগুনমুখা সাইক্লোন সেন্টার কাম কিল্ডার্স গার্ডেনের দ্বিতীয় তলায় এক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোর্শেদ আলম, যুগ্ম জেলা ও দায়রাজজ ও সিনিয়র সরকারি জজ পটুয়াখালী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গলাচিপা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী জজ রাংগাবালী আলমগীর কবির, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাংগাবালী দোলন হাসান, রাংগাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম হাওলাদার, পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাউদ্দিন, পটুয়াখালী জেলা পিপি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মো. মজিবুর রহমান টোটন, গলাচিপা আইনজীবী প্রতিনিধি সিনিয়র এ্যাড. মো. মোকলেছুর রহমান, সিনিয়র এ্যাড. মো. রাইসুল ইসলাম জাহিদ, সিনিয়র এ্যাড. মো. জসিম উদ্দিন, রাংগাবালী উপজেলার এজিপি এ্যাড. মো. মোশারফ হোসেন, সিনিয়র এ্যাড. মো. নূর আলম ফকু, এ্যাড. মো. সাইফুল ইসলাম সজল, এ্যাড. মো. ইশতিয়াক আহমেদ ধ্রুব, এ্যাড. মো. আবু তাহেরসহ আরও অনেক আইনজীবী,
গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. ফেরদাউস মিয়াসহ রাংগাবালী আদালতের কর্মচারী ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. সালাউদ্দিন।
সভায় রাংগাবালীর এজিপি এ্যাড. মো. মোশারফ হোসেন নতুন আদালতের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, “এখানে এখনো টেকসই ভবন নেই, নেই পর্যাপ্ত ফার্নিচার বা নথিপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা। একটি টিনসেট ঘরে আদালতের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে নথি ভিজে যায়। এমনকি বাউন্ডারি ওয়াল পর্যন্ত নেই।”
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দোলন হাসান বলেন, “হাজতী আসামি রাখার কোন হাজতখানা নেই, মামলার জব্দকৃত মালামাল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। জনবল সংকটও রয়েছে।”
গলাচিপা প্রতিনিধি এ্যাড. মো. মোকলেছুর রহমান জানান, “জেলা বারের পক্ষ থেকে ওকালতনামা বিক্রির জন্য একজন পিয়ন নিয়োগ দিলে আইনজীবীদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে।”
এ্যাড. মো. আবু তাহের বলেন, “রাংগাবালীতে দেওয়ানী আদালত চালু হলেও অনেক মামলা এখনও পটুয়াখালীতে রয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত সেই মামলাগুলো রাংগাবালীতে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।”
পটুয়াখালী জেলা পিপি ও বিএনপি জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মো. মজিবুর রহমান টোটন বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার তড়িঘড়ি করে অবকাঠামো প্রস্তুত না করেই আদালত চালু করেছে। আগে ভবন, ফার্নিচার, ও আবাসনের ব্যবস্থা করে আদালত শুরু করা উচিত ছিল।”
পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “একটি টিনসেট ভবনে আদালত চালানো সম্ভব নয়। আগুনমুখা সাইক্লোন সেন্টার ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়—তখন আদালতের কার্যক্রম চলবে নাকি মানুষ আশ্রয় নেবে? তাই টেকসই ভবন নির্মাণ জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “রাংগাবালীর আইনজীবীরা যেন টাউট ও দালালদের আশ্রয় না দেন, কোন টাউন ও দালাল পেলে তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোর্শেদ আলম বলেন, “আদালত যেহেতু শুরু হয়েছে, এখন এটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কাছাকাছি যদি কোনো পাকা ভবন ভাড়া পাওয়া যায়, জানালে আমরা প্রয়োজনীয় আসবাবসহ সব ব্যবস্থা করে দেব।”
প্রধান অতিথি জেলা ও দায়রাজজ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই দ্বীপাঞ্চলে আদালত স্থানান্তরের ফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছে, তবে অবকাঠামো উন্নয়ন করে শুরু করা হলে আরও ভালো হতো। এখান থেকে নদী পাড়ি দিয়ে হাজতি আসামি জেলা কারাগারে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এখানে একটি মিনি কারাগার নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে।” তিনি আরও আশ্বাস দেন, “আদালত ভবনসহ যাবতীয় সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সভা শেষে জেলা চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের নথিপত্র পর্যালোচনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাংগাবালী উপজেলা আদালতের পেশকার মো সোহেল এবং কর্মচারীবৃন্দ।
Leave a Reply