মোঃ মাহমুদুল হাসান -স্টাফ রিপোর্টার:
রোগী সেবা নিতে আসলেও, তারা ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে, ক্ষোভ নিয়ে।
সকালে হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা মেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড— সর্বত্র অপরিচ্ছন্নতা আর বিশৃঙ্খলা। রোগীদের শয্যা নেই, ফ্লোরে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন অনেকে। বাথরুমের অবস্থাও একই— নোংরা, পানি নেই, নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।
এক রোগীর স্বজন মোছা. রুবিনা বলেন,"আমার ভাইর বউ প্রসব ব্যথা নিয়ে আইছে। শুইতে পারছে না, ডাক্তার নাই, নার্সরা গালাগালি করে। আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার সামর্থ্য নেই।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, অনেক নার্স ও কর্মচারী অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। রোগীদের প্রশ্ন করলে বিরক্তি প্রকাশ করেন, অনেকে "গালিগালাজও" করে থাকেন।
একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন,"সরকারি হাসপাতাল বলেই আসছি। কিন্তু এমন সেবা পেলে তো মানুষ মরেই যাবে।"- যন্ত্রপাতির জীর্ণ অবস্থা, ঔষধ সংকট রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট বা অকার্যকর। ফলে জরুরি টেস্টও বাইরে গিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
দেখা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ওষুধ অনেক সময় মজুদে নেই বলে জানানো হচ্ছে। এতে করে দরিদ্র রোগীদের বাইরে গিয়ে উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনতে হয়।
হাসপাতালের ভেতরেই সক্রিয় একটি দালালচক্র — যারা রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের সাথে কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশও রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেঃ জেনাঃ ডাঃ এ কে এম মশিউল মনীর এর সাথে ছাত্র প্রতিনিধিরা দেখা করে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, আমি বিষয়গুলো জানি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও যন্ত্রপাতির মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেবার মান উন্নয়নে নার্সদের প্রশিক্ষণ ও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন,
"দালাল চক্র নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন লিখিত অভিযোগ দেন, যাতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি।"
নাগরিক অধিকারকর্মী মহিউদ্দিন রনি বলেন:
শেরে বাংলা হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা দেখে হতাশ না হয়ে পারা যায় না।
"রোগী চিকিৎসা নিতে আসে, মরার জন্য নয়। অথচ এ হাসপাতালে রোগীর কষ্ট যেন কেউ দেখেও না দেখে! এটা শুধু অব্যবস্থা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অবহেলার নগ্ন প্রকাশ।"
তিনি আরও বলেন,"সরকারি হাসপাতাল জনগণের, এটা ভুলে গেলে চলবে না। নাগরিকদের ন্যূনতম সম্মানবোধ, পরিষ্কার পরিবেশ ও মানসম্মত সেবার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার আমরা বারবার পদদলিত হতে দেখছি।"
"এই হাসপাতালের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। দালালচক্র, দুর্নীতি, অবহেলা ও অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।"
"এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ হাসপাতালের দুর্ভোগ মানেই আমাদের সবার জীবনের ঝুঁকি।"
হাসপাতালের ভর্তি এক রুগি বলেন, চিকিৎসা নয়, যেন মৃত্যুর প্রহর গোনা!
হাসপাতাল মানেই যেখানে রোগমুক্তির আশ্রয়, সেখানে শেরে বাংলায় যেন রোগীর মৃত্যুই হয়ে উঠেছে অনিবার্য নিয়তি। পরিবার-পরিজন নিয়ে রোগী আসে সুস্থতার আশায়, কিন্তু ফিরে যায় অসহায়, অপমানিত হয়ে।
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঘিরে সাধারণ মানুষের একটাই চাওয়া—মানবিক চিকিৎসাসেবা”। সেটা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে অব্যবস্থা আর দুর্নীতির ভারে। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।