শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কবে খুলছে? এ নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। বিভিন্ন ধাপে বেড়েই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর সরকার পক্ষ থেকে আশার বাণী শোনানো হচ্ছে। এদিকে শিক্ষার্থীরা ঝোঁকছেন মোবাইল গেমসে। অনলাইনে বিভিন্ন গেমস খেলেই তাদের দিন কাটছে। এতে পড়াশোনার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অবসর যাপনে পাঠ্যবই তো পড়ছেনই না,পড়ছেন না ভালোমানের কোনো সৃজনশীল বইও। পড়াশোনার প্রতি তাদের অনীহা চলে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে এ প্রজন্ম মেধাশূন্য হয়ে যাবে, এমনটা আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং শিগগির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি তুলছেন সচেতন মহল। অনেকে বলছেন, নির্বাচন হতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস/পরীক্ষা চলতে পারে না কেন? আবার অনেকে বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা জাতিকে মেধাশূন্য করার পায়তারা। এমন নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে সচেতন মহলে। সকলের দাবি একটাই দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে।
শাকেল নামের আর এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা খুবই জরুরি বলে আমি মনে করছি। দীর্ঘদিন স্কলেজ বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠি মোবাইল গেমসে আসক্ত হচ্ছে।পরিস্থিতিই আমাদেরকে এমন হতে বাধ্য করেছে। পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলতেছি।তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাই, যাতে তিনি স্বাধ্যবিধি মেনে কলেজ খোলার ব্যবস্থা করেন।
মনিশা পাল নামের আর এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা খুবই জরুরি বলে মনে করছি। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক সহপাঠি নাটক, সিনেমা ও মোবাইল গেমসে আসক্ত হচ্ছে। নিজেও যে এর বাইরে তা না। পরিস্থিতিই আমাদেরকে এমন হতে বাধ্য করেছে। পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানো যাচ্ছে না। বাসায় থাকতে থাকতে রোবট হয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানাই, যাতে তিনি স্বাধ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার ব্যবস্থা করেন।
দরগাগেইট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীনা কর্মকার বলেন, এই যে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, এটা শতভাগ শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। ১০-১২% শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ পাচ্ছে। বেশিরভাগই পাচ্ছে না। জীবনের থেকে তো পড়া বেশি না! আবার জীবন থাকতে তো পড়া দরকার। প্রকৃত মানুষ হতে হলে মনুষত্বের দরকার। মনুষত্ব অর্জন করতে হলে পড়াশোনা দরকার। আমরা শিক্ষার্থীদের সীট দিচ্ছি বা টেলিফোনে পড়াটা বলে দিচ্ছি এর চেয়ে ভালো হয় যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একদিন ওয়ান, একদিন টু, একদিন থ্রি… এভাবে যদি পাঠদান করা হয়। প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের হাতে ধরে ধরে শেখাতে হয়। তাদের অনেকের অভিভাবকের শিক্ষা খুবই কম। আমরা তাদেরকে বলি, আপনারা শুধু খেয়াল রাখবেন আপনার সন্তান সাদা খাতায় দাগ দিচ্ছে কি না। বাকিটা আমরা দেখবো। কিন্তু দূর থেকে তো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। দেখতে হলে তো স্কুলে আসতে হবে শিক্ষার্থীদের। কিছু কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল গেমসে আসক্ত হচ্ছে। অভিভাবকরা যদি সচেতন হোন কিছুটা আসক্তি কমবে। সরকার যদি মনে করেন স্বাস্থ্যের ওপর, জীবনের ওপর কোনো হুমকি নেই তাহলে ক্লাস খুলে দিতে পারেন। আর যদি স্বাস্থ্যর ওপর ঝুঁকি থাকে তাহলে আমি না খোলারই পক্ষে। কারণ, আগে জীবন তারপর পাঠ।
সীমান্তিক আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা গেমসের প্রতি ঝোঁকছে। প্রতিষ্ঠান খুলে সপ্তাহে একদিন হলেও যদি ক্লাস করানো যায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও দিক নির্দেশনা পাবে। তাদের মাঝে ফুরফুরে অবস্থা ফিরে আসবে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দেখাও যায় না তাই অতোটা গুরুত্ব হয়না ক্লাসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীদের চোখে চোখে রেখে পাঠদান করা যায়। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। তাই ভালো হবে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা। নইলে আমাদের শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ প্রজন্ম মেধাহীন হয়ে যাবে। এ অবস্থা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।
দি এইডেড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শমসের আলী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এই কারণে জরুরি যে, করোনাকালীন সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাশে অংশ নিতে পারছে না। এর কারণ হলো ডিভাইসের অভাব। তারপরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে যে প্রশ্নোত্তর সেটা অনুপস্থিত থাকে ক্লাশে। যারা ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাশ করছেন তাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক সময় হ্রাস পায়। এবং তারা নানা ধরণের গেমসে আসক্ত হয়ে যায়। ডিভাইসের মাধ্যমে তারা যতট শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় গেমসে আসক্ত হয়ে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা জরুরি। তবে আমার কথা হলো একসাথে সবগুলো ক্লাশ না নিয়ে আজ সিক্স কাল সেভেন পরশু এইট… এভাবে পর্যায়ক্রমে নিলে ঝুঁকিটা কম থাকবে। অনেক অভিভাবক বলছেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। গেমসে খুব বেশি আসক্ত হওয়ার ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
শাহজালাল জামেয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন অনলাইনে ক্লাশ করার কারণে বোরিং ফিল করছে। আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় আড়াইহাজার স্টুডেন্ট। কিন্তু অনলাইনে ক্লাশে ২০% এর উপরে এক্টিব হয় না। এতে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাশ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্ভোগ চলে আসবে।
মদন মোহন কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মিহির মোহন বলেন, সরকার বলছে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে স্কুল-কলেজ খোলা হবে। এত টিকা একসাথে সরবরাহ করা যাবে না। এটা অসম্ভব ব্যাপার। তাই উচিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ নিয়মে স্কুল-কলেজ চালু করা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। তারা মানবতার জীবনযাপন করছেন।
Leave a Reply