আওরঙ্গজেব কামাল:
বর্তমানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সাংবাদিকতা সাদা কাফনে মোড়ানো রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে জীবন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং তাদের কাজ যেন একটি সাদা কাফনে ঢাকা পড়েছে, যা তাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার অভাবকে নির্দেশ করে। সম্প্রতি, সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা, হুমকি এবং হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হয়তো কিছুটা আলোর মুখ দেখলেও বর্তমানে সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাঠের সাংবাদিকদের জীবন হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করেছেন সুশিল সমাজ। তারা বলছেন,গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খাতায়-কলমে সুরক্ষিত হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিয়ে সাম্পতিক সময়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়েছে। গত ১৬ বছরে রাজধানীসহ সারা দেশে ১৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। রক্তস্নাত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গণমাধ্যমকে এখনো যারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দুই হাজার লাশের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনও হত্যা, নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সম্পতি সাংবাদিকদের সাথে কিছু ঘটনা নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা ও সমলোচনা অব্যহত রয়েছে। দেশে এমন সাংবাদিকও আছেন, যারা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে সত্য উদঘাটনে অটল থেকেছেন। উদাহরণস্বরূপ গাজীপুরে চাঁদাবাজির ভিডিও প্রকাশ করায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা,গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ১৯৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে হত্যার হুমকি পেয়েছেন ৮ জন। এই সময়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলার আসামি হয়েছেন ৪৪ জন সাংবাদিক। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছয় সাংবাদিক। এছাড়া ২০১৮ সালের শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সত্য বলায় আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, ফরিদপুরে দুর্নীতি প্রকাশের জন্য সাংবাদিক গৌতম দাসকে অফিসেই গলা কেটে হত্যা, চট্টগ্রামে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় সাংবাদিক মোজাফফর হোসেনের নৃশংস হত্যা। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছিলেন। আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে ৩০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন, দেড় হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরের তাহির জামান প্রিয়-সহ নিহত ৬ সাংবাদিকের সকলেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত সাংবাদিক হত্যার বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এমনকি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত দিতে পারেনি। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ এ পর্যন্ত ১১৯ বার পেছানো হয়েছে।এ ধরনের অসংখ্য ঘটনার বিচার হয় না, আর হলেও হয় ধীরগতিতে প্রভাবশালীদের চাপেই অধিকাংশ বিলীন হয়ে যায়। দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকার বা রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ। অনেক মিডিয়া হাউজ পক্ষপাতদুষ্টভাবে খবর প্রচার করে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আর্থিক চাপ অর্থলোভে পড়ে অনেক সাংবাদিক হলুদ সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। আরেকটি বড় সমস্যা সাংবাদিকদের সুরক্ষার অভাব হুমকি ও সহিংসতা তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগকে খর্ব করে। বর্তমানে অনেক সংবাদ পত্র অর্থ অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ পত্রিকাগুলি বিজ্ঞাপন নির্ভর হওয়ায় এমটি ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া প্রকৃত সাংবাদিকরা এ পেশা ছেড়ে অনন্য পেশায় ঢুকছে আবার নিজেকে বাঁচাতে অপরাধীরা এই পেশায় ঢুকে পেশাকে বিতর্কের মধ্যে ফেলছে। একদিকে সাংবাদিক সংগঠনগুলি নিজেদের বড়ত্ব প্রমান করতে মরিয়া অপরদিকে সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে আত্নদন্দের কারনে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করছে। সব দিক বিবেচনায় গণমাধ্যম কর্মী বা সাংবাদিকতা হুমকির মধ্যে পড়েছে। আমরা জানি গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বা ভিত্তি বা অনেকে বলেন রাষ্ট্রের আয়না। আর সকল সাংবাদিক বা সাংবাদ কর্মী হলো এই ভিত্তি বা স্তম্ভের এক একটি ইট বা ক্ষুদ্র একক যাদের মাধ্যমে এই স্তম্ভ দাড়িয়ে আছে বা রাষ্ট্র তার চরিত্র ভালো ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। আমি পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেছি একটি রাষ্ট্রের অন্যান্য তিনটি ভিত্তি বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সামঞ্জ্যতা বা যোগসূত্র বিধান করে সংবাদমাধ্যম আজ এক নম্বর ভূমিকা পালন করছে । একটি রাষ্ট্র ও সমাজে জনগন ও সরকারের কি দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের কোথায় কি হচ্ছে ইত্যাদি সবার সামনে তুলে ধরে গণমাধ্যম এক মহান দায়িত্ব পালন করে চলেছে। সে হিসেবে গণমাধ্যম বর্তমানে সমাজের গণআদালত, বিবেক ও মূল্যবোধের মানদন্ড সকলের উদ্ধে । কিন্তু সবদিক থেকে বিচার বিবেচনায় গণমাধ্যম কর্মীরা রয়েছেন একেবারে তলানিতে । সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য । গণমাধ্যম ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভাব না। গণমাধ্যম সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে সব সময়। কিন্ত বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা বার বার গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর দোষারোপ করছেন। আমি মনে করি যে টা একে বারে ঠিক না। হা মেনে নিচ্ছি হয়তো কিছু গণমাধ্যম ও সাংবাদিক রাজনৈতিক তোষামোদকারী হয়ে উঠেছিল। কিন্ত সেটা খতিয়ে দেখতে হবে তারা কোন পরিস্থিতিতে এমন টি করেছে। যদি তারা অপরাধী হয় তাহলে তাদের বিচার হওয়া উচিত। তবে আমি বলবো দেশের সেই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েটি। আমি জানি গণমাধ্যম থেকে জনগণের একমাত্র প্রত্যাশা সত্য