মো:রফিকুল ইসলাম (সবুজ)
যশোর প্রতিনিধি
অপপ্রচার-গুজব ছড়ালেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা: পুলিশ সুপার রওনক জাহান
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোর জেলাজুড়ে পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। পূজাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপপ্রচার, গুজব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি কিংবা পূজামণ্ডপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) রওনক জাহান। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন—“গুজব ছড়ানো বা উসকানি দেওয়া মাত্রই আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, অপরাধীর পরিচয় নির্বিশেষে।”
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন এসপি রওনক জাহান।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এসপি জানান, যশোর জেলার মোট ৭০৬টি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিতে চারটি সেক্টরে স্ট্রাইকিং টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় বিশেষ টিমের পাশাপাশি ৪০টি মোবাইল টিম ও ১৭২টি মোটরসাইকেল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। এ সময় নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রমও চলবে। পূজা উৎযাপন পরিষদ ও স্থানীয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ কাজ করবে।
তিনি বলেন, পূজামণ্ডপগুলোকে তিনটি স্তরে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির চিহ্নিত করা হয়েছে। সদর উপজেলায় পাঁচটি পূজামণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে, কারণ সেখানে মানুষের সমাগম বেশি হয়।
গুজব ঠেকাতে সাইবার টিম
এসপি রওনক জাহান আরও বলেন, “অনেক সময় ছোটখাটো ঘটনা ধর্মীয় রূপ নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যা গুজব আকার ধারণ করে। এ ধরনের পরিস্থিতি রোধে জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম টিম ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকবে।” তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অপপ্রচার বা সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিসি ক্যামেরা ও বিশেষ নির্দেশনা
পুলিশ সুপার পূজা উৎযাপন পরিষদ ও স্থানীয় কমিটিকে সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রয়োজনে স্বচ্ছলদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এ ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেন তিনি।
মাদকবিরোধী জিরো টলারেন্স
তিনি বলেন, “পুলিশ একা মাদক প্রতিরোধ করতে পারবে না। মাদকবিরোধী কার্যক্রমে সমাজের প্রতিটি মানুষকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।” মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতির কথাও এ সময় তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়
এসপি জানান, শুধুমাত্র পুলিশ নয়, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেও সমন্বয় করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
পুলিশের সাম্প্রতিক সাফল্য তুলে ধরা
মতবিনিময় সভায় এসপি রওনক জাহান যশোর জেলা পুলিশের সাম্প্রতিক সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে—
মণিরামপুর থানায় বাবার হাতে মেয়েকে হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার।
সম্প্রতি সংঘটিত ডাকাতি মামলায় ডাকাত আটক ও মালামাল উদ্ধার।
ছিনতাইকারী আটক।
ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
এসপি জানান, এসব সাফল্য জেলা পুলিশের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার প্রতিফলন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান
সভা শেষে পুলিশ সুপার দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, উসকানি বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করা হবে। অপরাধীর ধর্ম, বর্ণ বা পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। আইন তার নিজ গতিতেই চলবে।”
তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান—“সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে সরকারি নির্দেশনা মেনে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করুন।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার। আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবিব, ডিবির ওসি মঞ্জুরুল হক ভুঞা, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Leave a Reply