গতকাল মঙ্গলবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান সংস্থাটির সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি বলেন, পি কে হালদার ও তার ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে ১০টি পৃথক পৃথক মামলা অনুমোদন করা হয়েছে। ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই ১০টি মামলা করা হবে। একই সঙ্গে পি কে হালদারের ৩৩ সহযোগীর সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পি কে হালদারের তদন্তের অংশ হিসেবে তার সাত হাজার ৮০ শতাংশ জমিসহ একটি ১০ তলা ভবন জব্দে আদালত থেকে আদেশ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এক আবেদনে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
গতকাল যে মামলাগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অনুসন্ধান করেছেন দুদক উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানসহ চার সদস্যের টিম।
দুদক সচিব বলেন, যে ১০টি মামলায় ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে তার প্রতিটি মামলায় রিলায়েন্স লিজিং ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি.কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে যাচাই বাছাই ছাড়াই ঋণের বিপরীতে কোনো মর্টগেজ গ্রহণ ব্যতিরেখে ১০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিকগণকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন এবং বেনিফিশিয়ারিগণ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
দুদক সচিব বলেন, পিকে হালদারের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. রাশেদুল, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হোসেন ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম, এ হাশেম এবং বোর্ড সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের অর্থ উত্তোলন করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দৃনান এ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনাল ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেড চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জীকে আসামি করা হয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক মো. নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মো. নুরুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও পরিচালক জহিরুর আলম। সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব বলেন, আসামিরা পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিং এর মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে উক্ত অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২ ও দন্ডবিধি, ১৮৮০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ অপরাধ করেন।
দুদক উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বলেন, আসামিরা ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ফলে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ করায় এই ৩৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক ১০টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদক সচিব বলেন, ১০টি মামলা ছাড়াও পিকে হালদারের আরো ৩৩জন সহযোগীর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শিগগির এদের বিরুদ্ধে সম্পদ নোটিশ জারি করা হবে। এছাড়া, পি.কে হালদারের সহযোগী ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের ইমিগ্রেশন বন্ধ চেয়ে ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে পত্র দেওয়া হয়েছে।এনএমএস।
Leave a Reply