শিরোনাম :
কিশোরগঞ্জের খুদে ফুটবলার জিসানের পাশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আশুগঞ্জে ৪৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ০১ জন মাদক কারবারী গ্রেফতার। মনপুরায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার অভিযোগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজি চালকসহ (২দুই)জন নিহত । এসএম তরিকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিকদের মিলনমেলায় রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের বর্ষপূর্তি উদযাপন নবীন প্রজন্মই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে- কফিল উদ্দিন আহমেদ লালমোহনে স্কুলের সোলার ব্যাটারি চুরির ঘটনায় আটক দুই আমতলীতে জামায়াতে ইসলামী’র জনসংযোগ কর্মসূচি বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুনের উপস্থিতি উজানে ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি আবারও বাড়ছে

প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে আমারে ভাতা কার্ডটা কইরা দিতো।

সাইফুল ইসলামঃ
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১
  • ৩০৭ বার পঠিত

বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গেছিলাম। দেশ স্বাধীন হইলো। আমরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমাগো এই দেশ আমরা জয় করলাম। যখন জানতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকা করে কার্ড করে দিতাছে সরকার। তখন আমার কাগজ পত্র লইয়া অনেক মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু হয় নি। আমারে মুক্তিযুদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিয়া দিলো। কেন বাদ দিলো তা জানি না বাবা।
বড় কষ্ট লাগে বাজান, জাগো লগে একসাথে যুদ্ধের মাঠে দিনভর রইলাম তাগো কার্ড হইলো, আর আমি গরীব বইলা কি আমার ডা হইলো না? এই বয়সে আইসাও কাজ কাম কইরা সংসার চালাতে হয়। আমারে যদি কার্ডটা কইরা দিতো তাহলে এই বয়সে এতো কষ্ট করতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি জানতে পারতো তাহলে আমারে কার্ডটা কইরা দিত, কিন্তু তার পর্যন্ত আমার কষ্টের কথাতো পৌঁছায় না। এভাবেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে সত্তরউর্ধো বয়সী বৃদ্ধ দোহারের আয়ান খাঁ তার কষ্টের কথা বলছিলেন।

ঢাকার দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের নয়ন খা’র ছেলে এই আয়ান খাঁ। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেও স্বীকৃতি না পাওয়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তরুণ আয়ান খা। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের বোয়ালী ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং নিয়ে ক্যাপ্টেন আঃ হালিম চৌধুরী ও দিরাজউদ্দিন কমান্ডারের নেতৃত্বে দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর বোয়ালী ক্যাম্পে আবারো যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বোয়ালি ক্যাম্পের অধীনেই ছিলেন তিনি। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসেন দোহারের নিজ গ্রামে। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

যুদ্ধ পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হয়। সেই সময় তার যুদ্ধকালীন সহযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও আয়ান খাঁ এখনো পাইনি সেই স্বীকৃতি। একটু স্বীকৃতির আশায় বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। উপজেলা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার রজ্জব আলী কমান্ডারের অধীনে ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছে এমন প্রত্যয়নপত্রও রয়েছে তার। আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গনী ওসমানীর স্বাক্ষরিত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র । এসব প্রত্যয়নপত্র থাকার পরও সবশেষে বাছাই পর্বেও বাদ পরে এই মুক্তিযোদ্ধার নাম। স্বাক্ষাতপর্বে পাঁচজন সহযোদ্ধা স্বাক্ষী দেওয়ার পরও উপযুক্ত স্বাক্ষী নেই এমন অজুহাতে তার আবেদন বাতিল করা হয়। কেমন স্বাক্ষী হলে পাবেন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি, উঠবে তালিকায় নাম এমন প্রশ্ন রণক্ষেত্রের যোদ্ধা আয়ান খাঁর।

বৃদ্ধ বয়সে এসেও সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে তাকে। একমাত্র ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকছেন। ফলে তিন মেয়ে, দুই নাতিন ও স্ত্রী নিয়ে কোন রকম দিন কাটছে স্বীকৃতি না পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধার। কৃষিকাজ করে বাবা বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। দুই মেয়েকেই স্বামীরা ডির্ভোস দিলে সন্তানদের নিয়ে এখন বাবার বাড়িতেই থাকেন মেয়েরা। শত অভাব ও কষ্টের মাঝেও ছোট মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। ছোট মেয়ে এবার জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবার স্বপ্ন বড় দুই মেয়ের মতো যেন ছোট মেয়ের কপাল এভাবে না পুড়ে। তাই শত অভাবেও লেখাপড়া করাচ্ছেন বাবা। সাত সদস্যর এই পরিবারে একমাত্র উপার্জন করেন সত্তর বছর বয়সী যোদ্ধা এই বাবা।

একই সাথে যুদ্ধ করেছেন নয়াবাড়ির ইদ্রিস আলী ও আব্দুল হালিম মাস্টার। আয়ান খাঁ মুক্তিযোদ্ধার হিসেবে স্বীকৃতি ও ভাতা না পাওয়ায় তারাও বিস্মিত।

নয়াবাড়ি ইউনিয়নের কমান্ডার মনির আহমেদ মোল্লা জানান, আয়ান খাঁ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

সহযোদ্ধারা স্বীকৃতির পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে ভাতা কার্ড পেলেও নিজে না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে আয়ান খাঁ। বয়সের কারনে এখন আর আগের মতো কাজকর্ম করতে পারেন না। মরার আগে স্বীকৃতি ও ভাতা কার্ড পেলে নিশ্চিন্তে মরতে পারেন বলে জানান রণক্ষেত্রের বীর এই মুক্তিযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন আকুতিই জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com