শিরোনাম :
বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান সেলিম রহমানের একমাত্র ছেলে খান সিফাত রহমান রাফির ১৭তম জন্মদিন পালিত যশোরে সিআইডি সদস্যদের ওপর হামলা ছাত্রলীগ নেতা তুষার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও প্রকাশ্যে হামলার অভিযোগ কালীগঞ্জে চুরি করে বেশি দামে অন্যত্র সার বিক্রি, জরিমানা ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির নবগঠিত কমিটি ঘোষণা নানান আয়োজনে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন কক্সবাজারে তরুণ সাংবাদিক নুরুল আমিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার,বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব (B.C.P.C)–এর পক্ষ থেকে মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি। নওগাঁ-১ আসনে ইসলামি আন্দোলনের সদস্য-কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত গলাচিপায় আদালত ভবন থাকলেও দেওয়ানী মামলা চলছে পটুয়াখালীতে বহিষ্কৃত এসআই মাহবুব হাসান ২ দিনের রিমান্ডে ঢাকার উত্তরায় খাল পরিষ্কার অভিযান

অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার টাকা না থাকায় ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরে ৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে বাবা।

মাসুদ রানা লেমন, স্টাফ রিপোর্টার;
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১
  • ৬৫২ বার পঠিত

অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় ৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এসেছেন তারেক ইসলাম নামে এক বাবা। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৬ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ১১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে বেলা সোয়া তিনটায় রংপুরে পৌঁছান তিনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বারবার হু-হু করে কাঁদতে থাকা তারেক ঢাকা পোষ্ট প্রতিবেদক সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুককে এ তথ্য জানান। সাত মাস বয়সী শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করায় গত (১৩ এপ্রিল) রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য জান্নাতকে রংপুরে রেফার্ড করেন। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা তারেক। চারদিন ধরে কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে নিজে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে রংপুরে আসেন তিনি। শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সন্তানকে কোলে নিয়ে ছুটোছুটি করতে দেখা যায় বাবা তারেক ইসলামকে তার সঙ্গে থাকা অন্য স্বজনদের চোখে মুখে তখন দীর্ঘ নয় ঘণ্টা রিকশায় চড়ে আসার ক্লান্তির ছাপ। তারেক ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে অসুস্থ বাচ্চাকে অনেক কষ্ট করে রংপুরে এসেছি। আমি রিকশা চালাই। অ্যাম্বুলেন্সে করে বাচ্চাকে নিয়ে আসার মতো আমার সামর্থ্য নেই। চারদিন আগেই ডাক্তার বাচ্চাকে রংপুরে নেয়ার জন্য বলেছিল। আমি বাচ্চাকে যে রংপুর নিয়ে আসব এজন্য আমার কাছে এক-দুইশ টাকাও ছিল না। প্রথমে বাচ্চাকে ডাক্তার দেখানো ও ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় অন্যের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা ধার নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমি কোনো দিশা পাচ্ছিলাম না। অসহায় তারেক বলেন, শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে রাতে বাচ্চাকে নিয়ে বাসায় যাই। বাচ্চার কন্ডিশন দেখে আমি চিন্তিত। কিন্তু লকডাউনোর কারণে আমার অবস্থা এতটাই খারাপ যে কালকে কি খাব সেই টাকাও আমার কাছে নেই। এ অবস্থায় আমি কীভাবে বাচ্চাটাকে নিয়ে এত দূরের রাস্তা আসব ভেবে পাচ্ছিলাম না। যখন অ্যাম্বুলেন্সের টাকা জোগাড় করতে পারলাম না। তখন সন্তানকে বাঁচানোর জন্য রিকশা চালিয়ে রংপুরে আসার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, সকাল ছয়টার দিকে আল্লাহর নাম দিয়ে বাসা থেকে বের হই। রাস্তায় আসতে আসতে তারাগঞ্জের দিকে এসে রিকশায় সমস্যা দেখা দেয়। পরে এক অটোচালক বাচ্চার সমস্যার কথা জেনে আমাকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার জন্য বাধ্য হয়ে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা রিকশাটা ঠেলে নিয়ে আসি। পথিমধ্যে আরেকটা গাড়ি আমাকে মেডিকেল পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করেন। প্রায় নয় ঘণ্টা পর বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছি। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তির রশিদ নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের পাঁচতলার শিশু বিভাগে (১৮ নং ওয়ার্ড) শিশু জান্নাতকে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখার পর কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছেন। আজকের পর্যবেক্ষণ শেষে অপারেশন করা লাগতে পারে বলে চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথা জানান তারেক ইসলাম। কিন্তু অপারেশন করার মতো টাকা তার কাছে নেই। এমনকি চিকিৎসকের লিখে দেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের ওষুধ, স্যালাইন, ইঞ্জেকশন কেনার জন্য একশ টাকাও নেই। এখন আমি কি করব আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না বলে জানান তারেক। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে তারেক ইসলাম। তিনি ১২ বছর বয়সেই রিকশা প্যাডেল ঘুরিয়ে বাবার সংসারের বোঝা সামলানোর যুদ্ধ শুরু করেন। বিয়ের পর স্ত্রী সুলতানা বেগমকে নিয়ে আলাদা থাকা শুরু করে। সংসার জীবনে তার নয় বছর ও তিন বছর বয়সী আরও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। তারেক রিকশা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ওয়াজ মাহফিলে সাউন্ড সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কাজ করত। কিন্তু করোনার মহামারি শুরুর পর থেকে অনুষ্ঠান না থাকায় তার বাড়তি আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতিতে ঠিকমতো রিকশা চালাতে না পেরে অসহনীয় কষ্ট নেমে এসেছে তার পরিবারে। অসহায় রিকশাচালক তারেক ইসলাম তার অসুস্থ শিশু জান্নাতকে বাঁচানোর জন্য সমাজের বৃত্তবান ও দানশীল মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার তো সামর্থ্য নেই বাচ্চার অপারেশন করাব। যদি সমাজের বৃত্তবান মানুষেরা এগিয়ে আসে আমি জান্নাতকে বাঁচাতে পারব। বাচ্চার হাসিমাখা মুখটা দেখতে পারব। আল্লাহর অশেষ করুণা আর সবার সহযোগিতা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই। শিশু জান্নাতের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতে চাইলে এ নম্বরে (০১৭৭৩৭২২৬০১) বিকাশ করতে পারবেন। অসহায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যোগাযোগ করুন ০১৩২০৫৪১১০৩ নম্বরে। বর্তমানে শিশুটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে (১৮ নং ওয়ার্ড) চিকিৎসাধীন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com