রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৪৫০টিরও বেশি সরকারি খাসপুকুর বছরের পর বছর রিটের মাধ্যমে দখলে রেখেছিল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সম্প্রতি আদালত এসব রিট বাতিল করায় সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে প্রায় ২ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া চালান, জাল দলিল ও ভুয়া মৎস্যজীবী সমিতির কাগজপত্র ব্যবহার করে আদালত থেকে অন্তর্বর্তী আদেশ এনে পুকুর দখল করত সিন্ডিকেট। এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো সরকার। শেষ মুহূর্তে রিটের কারণে ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেত।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বিষয়টি শনাক্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নেন। গত ২৫ মার্চ উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় রিট বাতিল ও সংশ্লিষ্ট ভুয়া সমিতির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি জানান, রিট বাতিল হওয়ায় ইজারা দিতে আর কোনো বাধা নেই। অল্পদিনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার পুকুর খাস কালেকশনের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হবে, এতে সরকারের রাজস্ব আয় হবে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শামসুল ইসলাম বলেন, এটি সরকারের বড় বিজয়। সিন্ডিকেট আর খাসপুকুর দখলে রাখতে পারবে না। গোদাগাড়ী ভূমি অফিসের সায়রাত সহকারী জুলেখা খাতুন জানান, ভুয়া চালান ও জাল কাগজপত্র রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভুয়া চালানের কারণে ৫৫টি পুকুরের লিজ বাতিল করা হয়েছে।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল বারী জানান, ২০২৩ সালের এপ্রিলের স্থগিতাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করে। এতে সরকারের পক্ষে বড় ধরনের আইনি বিজয় এসেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ীতে দেশের সবচেয়ে বেশি খাসপুকুর রয়েছে—৩ হাজার ৬৫০টির বেশি, আয়তন প্রায় ২ হাজার ৫৮০ একর। এর অর্ধেকের বেশি এতদিন রিটের ফাঁদে আটকে ছিল। সিন্ডিকেট বছরের পর বছর এসব পুকুর দখল করে মাছ চাষ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও ভূমি অফিসের কর্মচারীরা সিন্ডিকেটে জড়িত ছিলেন। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের না দিয়ে কাগুজে সমিতি তৈরি করে তারা খাসপুকুর দখল করত। আদালতের রিট বাতিলে এই দৌরাত্ম্যের অবসান হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
Leave a Reply