সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোঃ শাকিল খান রাজু।।
ভোলার মনপুরা উপজেলায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার না পেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন খালেক (২২) নামের এক জেলে। নিহত খালেক উপজেলার ২নং হাজীরহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বেল্লাল মিয়ার ছোট ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, খালেক দীর্ঘদিন ধরে একই ইউনিয়নের মৃত নুরু মিয়ার ছেলে রবুর নৌকায় দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে মাছ ধরার কাজ করতেন। তবে কয়েকদিন মাছ ধরতে না যাওয়ায় রবুর দুই ছেলে আশিক (২০) ও ইব্রাহিম (১৮) গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে লোকজনের সামনে খালেককে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে খালেক অচেতন হয়ে পড়লে তারা ফেলে রেখে চলে যায়।
পরে জ্ঞান ফিরে খালেক স্থানীয় নৌক্যাম্পে বিচার প্রার্থনা করলে তাকে নৌবাহিনীর সদস্যরা চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে যেতে বলেন। এ বিষয়ে ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাফরের কাছে গেলে তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে দিয়ে ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মহিউদ্দিনের কাছে যেতে বলেন। মহিউদ্দিন বিচার করার তারিখ নির্ধারণ করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি বা অন্য কেউ উপস্থিত হননি।
দুইদিন ধরে বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পেয়ে শেষমেশ গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন খালেক।
পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভোলায় রেফার করেন। পরে ভোলা থেকে ঢাকায় পাঠানো হলে আইসিইউতে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে খালেক মারা যান।
নিহতের বড় ভাই অভিযোগ করে বলেন,
আমার ভাইকে রবুর দুই ছেলে প্রকাশ্যে কুকুরের মতো মারধর করেছে। বিচার চেয়ে সে ইউনিয়নের মেম্বার-নেতাদের কাছে ধর্না দিয়েছে, কিন্তু কেউই দাঁড়ায়নি। বিচার না পেয়ে সে বিষ খেয়ে শেষমেশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আমরা ভাইকে ঢাকায় নিতে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছি। অথচ অভিযুক্তরা আমাদের কোনো সহযোগিতা পর্যন্ত করেনি। আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই।
নিহতের মা বলেন,
আমার ছেলেকে আশিক আর ইব্রাহিম কুকুরের মতো পিটিয়েছে। সে নৌবাহিনী, মেম্বার, নেতাদের কাছে বিচার চেয়ে ঘুরেছে ভিক্ষুকের মতো। কিন্তু কেউ বিচার করেনি। বিচার না পেয়ে আমার ছেলে বিষ খেয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্তদের মা জানান,
খালেক আমাদের আত্মীয় স্বজন। কিছুদিন মাছ ধরতে না যাওয়ায় আমার দুই ছেলে আশিক ও ইব্রাহিম তাকে মাত্র দুইটা থাপ্পড় দিয়েছে।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন বলেন,
ঘটনাটি ৭নং ওয়ার্ডের এলাকায় ঘটেছে। জাফর মেম্বার এলে আমি আসতাম। তবে এর বাইরে আমি আর কিছু বলবো না।
৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাফর বলেন,
খালেক আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম রবু নাছির ক্যারানির স্বজন নাছির ক্যারানিকে জানাতে। এরপর থেকে আর কিছু জানিনি।”
মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান কবির জানান,
“নিহত খালেকের মা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। তবে গত তিনদিনেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষ ঘটনাটিকে বিচারহীনতার করুণ পরিণতি বলে মন্তব্য করেছেন।
Leave a Reply